আজ রোববার (৪ আগস্ট) একদফা দাবিতে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বেলা ১১টায় রাজধানীসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বিক্ষোভ ও গণসমাবেশ পালিত হবে।
শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে এক ফেসবুক পোস্টে এসব কথা জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।
তিনি বলেন, এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি আগামীকাল (৪ আগস্ট) বেলা ১১টা থেকে রাজধানীসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বিক্ষোভ ও গণসমাবেশ পালিত হবে। সকাল থেকেই ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে ছাত্র-জনতাকে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
কর্মসূচি সফল করতে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী, পেশাজীবী, রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক নির্বিশেষে আপামর জনসাধারণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান আসিফ মাহমুদ।
তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ ও গণসমাবেশ পালন করব। তবে আঘাত এলে তা প্রতিহত করার সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখার আহ্বান রইল।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ ও একদফা দাবিতে রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হলো।
এদিকে শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হবে। আর এক মিনিটও এই সরকার থাকবে না। এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনার পদত্যাগ।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রিসভার সব সদস্যের পদত্যাগ দাবিতে রোববার (৪ আগস্ট) সারাদেশে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন শুরু হবে বলে সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়।
এর আগে দুপুরের পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও এর আশপাশের অবস্থায় নেওয়া শুরু করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কোটা আন্দোলনের সমর্থনে অভিভাবক ও অনেক শ্রেণি-পেশার মানুষও এতে অংশ নেন। এসময় অনেকের হাতে বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
গত শুক্রবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শনিবারের বিক্ষোভ এবং রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়।
অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে শুরু হতে যাওয়া সর্বাত্মক অসহযোগে কী করা যাবে, কী করা যাবে না— তাও জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।
বন্ধ থাকবে যেসব প্রতিষ্ঠান
* সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও কলকারখানা বন্ধ থাকবে। আপনারা কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন;
* শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে;
* দেশের কোনো কলকারখানা চলবে না;
* আমলারা সচিবালয়ে যাবেন না, ডিসি বা উপজেলা কর্মকর্তাদের নিজ নিজ কার্যালয়ে না যাওয়ার অনুরোধ।
বিল পরিশোধ ও রেমিট্যান্স পাঠাতে মানা
* কেউ কোনো ধরনের ট্যাক্স বা খাজনা প্রদান করবেন না;
* বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিলসহ কোনো ধরনের বিল পরিশোধ করবেন না;
* প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো ধরনের রেমিট্যান্স দেশে পাঠাবেন না;
* টাকা পাচার বন্ধে সকল অফশোর ট্রানজেকশন বন্ধ থাকবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে যেসব আহ্বান জানানো হয়েছে
* পুলিশ সদস্যরা রুটিন ডিউটি ব্যতীত কোনো ধরনের প্রটোকল ডিউটি, রায়ট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধুমাত্র থানা পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন ওয়ার্ক করবেন;
* বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যতীত অন্যান্য বাহিনী ক্যান্টনমেন্টের বাইরে ডিউটি পালন করবেন না;
* বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যারাক ও কোস্টাল এলাকায় থাকবেন।
বন্ধ থাকবে গণপরিবহন, সভা-সেমিনার বর্জনের আহ্বান
* সকল ধরনের সরকারি সভা, সেমিনার, আয়োজন বর্জন করবেন;
* বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না, কোনো ধরনের পণ্য খালাস করবেন না;
* গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, শ্রমিকরা কেউ কাজে যাবেন না।
ব্যাংক খোলা থাকবে রোববার, বন্ধ থাকবে হোটেল-রেস্টুরেন্টও
* জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রোববার ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে;
* বিলাস দ্রব্যের দোকান, শো-রুম, বিপণিবিতান, হোটেল, মোটেল ও রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে।
চালু থাকবে জরুরি সেবাখাত
* হাসপাতাল, ফার্মেসি, জরুরি পরিবহন সেবা যেমন- ঔষধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহন, জরুরি ইন্টারনেট সেবা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা এবং এ খাতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহন সেবা চালু থাকবে;
* নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানপাট বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত খোলা রাখার আহ্বান।