শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক দল গঠন করতে চলেছে বলে কয়েকদিন ধরে কথা চাউর হয়ে আছে। এরইমধ্যে বিদেশি গণমাধ্যমও এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলে, ‘বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনকারীরা তাদের বিপ্লবকে শক্তিশালী করতে নতুন দলের পরিকল্পনা করছে।’ এরপর আরও আলোচনায় আসে শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দলের বিষয়টি। কিন্তু, এসব তথ্য নাকচ করে দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও অন্তবর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। বলেছেন, এই মুহূর্তে রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাত সোয়া ৯টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে নাহিদ ইসলাম রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি নাকচ করে দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘এই মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগঠনের কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের স্পিরিট রক্ষায় সামাজিক-রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে কাজ করবে এবং সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্র পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করবে।’
একই পোস্টে নাহিদ ইসলাম লেখেন, রাজনৈতিক দলগঠন আমাদের গণঅভ্যুত্থানের অভিমুখ না। এই মুহূর্তে প্রয়োজন অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, নতুন করে দেশগঠন-সংস্কার ও অভ্যুত্থানের স্পিরিট ও জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা। ছাত্র-জনতা ও অন্তর্বর্তী সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করবে।
নাহিদ আরও লেখেন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত আমাদের এক দফার অংশ ছিল। সেজন্য বিস্তর কাজ ও রাজনৈতিক কার্যক্রম প্রয়োজন। জনগণের সঙ্গে আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা প্রণয়ন করতে চাই।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অফিসিয়াল গ্রুপে করা এক পোস্টে রাত ১১টার সময় লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক মাহফুজ আলমের লেখা পোস্ট নূর জাহান তুলে ধরেন। ওই পোস্টে দেখা যায়, মাহফুজ বলেন, রাজনৈতিক দল খোলার কথা বলা হয়নি! রয়টার্সে দেওয়া আমার বক্তব্য ভুলভাবে এসেছে। আর সে ভুল বক্তব্যের বাজে বা উদ্দেশমূলক অনুবাদ বাংলাদেশি মিডিয়া প্রচার করেছে।
রয়টার্সে আমার বক্তব্য ছিল, আমরা রাজনৈতিক সংগঠন নিয়ে এখনই ভাবছি না। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য আমরা কাজ করছি। গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ধরে রাখা এবং সরকারকে সংহত করা আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। রাষ্ট্র ও সমাজের নানা অংশীজনের সাথে কথা বলে আমরা আগামী বাংলাদেশের রূপরেখা নিয়েও কাজ করব। এ কাজে অন্তত এক মাস লাগবে। আর রয়টার্সও লিখেছে এক মাস পর নির্ধারিত হবে আমরা দল করব কি করব না! তবে, রয়টার্স একটি ভুল করেছে, নাগরিকদের বদলে তারা ভোটার শব্দটি ব্যবহার করেছে। অথচ, নির্বাচনি রাজনীতি নিয়ে আমাদের খুব কমই কথা হয়েছে। কৃষ্ণ কৌশিককে আমি লিখেছি, উনি হয়ত এটা এডিট করে দেবেন।
রয়টার্সের সাংবাদিক বারবার জিজ্ঞাসা করছিলেন, দ্বিদলীয়কাঠামো নিয়ে এবং তা উতরে যেতে রাজনৈতিক দল করব কি না। আমি বলেছি, আমরা দল বা ব্যক্তি নয়, ব্যবস্থার সংস্কার চাচ্ছি, যাতে যে দলই আসুক তাকে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ হতে হয়। কিন্তু, এমনভাবে বলা হলো যেন আমি মাইনাস টু চাচ্ছি। যেটা আমার উদ্দেশ না অবশ্যই।
আমাদের এখনকার লক্ষ্য, রাজনৈতিক লড়াইকে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ নিয়ে গঠনমূলক কাজের দিকে চালিত করা। উপযুক্ত সময়ে রাজনৈতিক গঠন/গড়ন কেমন হবে, তা সবাই জানতে পারবেন।
একই পোস্ট মাহফুজ আলমের ফেসবুক আইডিতেও দেওয়া হয়েছে। তার বরাতে অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও পোস্টটি তুলে ধরেছেন।