ছাত্র আন্দোলনে বিভিন্ন জেলায় ছাত্র-জনতা নিহত হওয়ার ঘটনায় গতকাল সোমবার ও গত রবিবার রাতে গাজীপুর, রংপুর ও মাদারীপুরে তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় মামলা হয়েছে আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধি ও নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের নামেও মামলা হচ্ছে প্রতিদিনই।
রংপুরে ফুল বিক্রেতা মেরাজুলকে হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা করেছেন নিহতের স্ত্রী নাজমীম ইসলাম। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পুলিশের সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ৩০ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া জেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তাসহ অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। রোববার বিকালে মহানগর হাকিম আমলী আদালতে মামলার আবেদন করেন নাজমীম ইসলাম।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ২০ জুলাই গাজীপুরের বড়বাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজমিস্ত্রি মঞ্জু মিয়া (৪৩) মারা যাওয়ার ঘটনায় গতকাল হত্যা মামলা হয়েছে।
শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, রংপুরের সাবেক সংসদ সদস্য টিপু মুনশি, মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ ৮৫ জনের নামে এই মামলা করেন নিহত ব্যক্তির পিতা মো. ইনছার আলী। রংপুরের পীরগাছার মঞ্জু মিয়া গাজীপুর বড়বাড়ী এলাকায় ভাড়া থেকে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন।
মামলায় অন্যান্য আসামির মধ্যে আছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান, সাবেক সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরন প্রমুখ। এ ছাড়া আরো ৫০০ থেকে ৭০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মাদারীপুর পৌর শহরের যুব উন্নয়ন অফিসের সামনে আন্দোলনে গত ১৯ জুলাই তাওহীদ সন্নামাত নিহত হওয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনা, সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ ৯২ জনের নামে হত্যা মামলা হয়েছে। গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাদারীপুর সদর থানার ওসি এ এইচ এম সালাউদ্দিন। রবিবার রাতে সদর থানায় মামলাটি গ্রহণ করা হয়। মামলার বাদী জেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব কামরুল হাসান।
মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করীম শামীমকে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট সকালে রাজবাড়ীতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ককটেল নিক্ষেপ, গুলিবর্ষণ ও মারধরের অভিযোগে আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের ৪৪ নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। গতকাল রাজবাড়ী সদর থানায় মামলাটি করেছেন শহরের সজ্জনকান্দা গ্রামের উৎস সরকার।
মামলার আসামিরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সোহাগ, মাসুদ রানা মাসুদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জাকারিয়া মাসুদ রাজীব, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহীন শেখ, জামাল খান, জাহিদ, শরীফ, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান, ইফতি হক সৌরভ প্রমুখ।
রাজশাহীর বাঘা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেনসহ আওয়ামী লীগের ১৩৩ জন নেতার নামে বিস্ফোরক মামলা করা হয়েছে। গতকাল বিএনপির নেতা জাহিদ হোসেন বাদী হয়ে থানায় এই মামলা করেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২৫ আগস্ট কিশোরপুর বাজারে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল করতে থাকেন। তখন বিএনপি নেতা জাহিদ মিছিল করতে নিষেধ করলে মিছিলকারীরা তাঁর দোকান ভাঙচুর করেন। পরে তাঁরা ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন।