ফেনীতে বন্যার পানি সরে গেলেও নোয়াখালী, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। শুধু বৃষ্টি নয়, বজ্রসহ বৃষ্টি। তাতে বেড়েই চলছে বন্যার পানি। এতে আতঙ্ক বাড়ছে পানিবন্দি ও বানভাসিদের। এদিকে বন্যার পানি সরে যাওয়ায় ফেনীর বিভিন্ন দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট।
নোয়াখালীর ৮ উপজেলার ৮৭ ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। ১১৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ২ লাখ ১৬ হাজার মানুষ। প্রধান সড়কের আশপাশে সহযোগিতা পেলেও প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে পৌঁছায়নি ত্রাণ সহায়তা। ফলে অধিকাংশ জায়গায় দেখা দিয়েছে ত্রাণের জন্য হাহাকার।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, নোয়াখালীর ৮ উপজেলার ৮৭ ইউনিয়নের পানিবন্দি মানুষের মধ্যে সরকারিভাবে নগদ ৪৫ লাখ টাকা, ৮৮২ টন চাল, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ৫ লাখ টাকার পশুখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
চাঁদপুরেও রাতভর বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। শাহরাস্তি ও হাজীগঞ্জে বন্যার অবনিত হয়েছে। তবে ফরিদগঞ্জে পানি কমায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। জেলার তিন উপজেলায় পানিবন্দি দেড় লাখ মানুষ।
এদিকে মঙ্গলবার রাত থেকে আজ (বুধবার) সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিতে লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও বন্যার পানি ঢুকে পাঁচটি উপজেলার প্রায় আট লাখ মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করছেন। এরমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন প্রায় ২৩ হাজার মানুষ। তবে বেশিরভাগ মানুষ কষ্ট করে বাড়িঘরেই রয়েছেন। বাকিরা উজানে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন।
নোয়াখালী থেকে অনবরত বন্যার পানি রহমতখালী খাল হয়ে লক্ষ্মীপুরে ঢুকছে। দুর্গম এলাকাগুলোতে পানিবন্দিদের জন্য কোনো খাবার যাচ্ছে না। এজন্য ফেসবুকসহ নানানভাবে ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে মানুষ। দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছাতে পর্যাপ্ত নৌকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নাহিদ-উজ জামান খান জানান, রোববার সকাল ৯টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলায় ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে বন্যার পানি ৬ ইঞ্চি বেড়েছে। রহমতখালী খাল হয়ে নোয়াখালীর পানি লক্ষ্মীপুরে অনবরত ঢুকছে। মুছাপুরের স্লুইস গেট ভেঙে গেছে। এতে এর একটি অংশের পানি বেগমগঞ্জ হয়ে লক্ষ্মীপুরে প্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে।
কুমিল্লায় ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকেই উঠেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। পানির নিচে তলিয়ে আছে ৬০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। তবে ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। কিছু এলাকায় এখনও জলাবদ্ধতা রয়েছে। এ ছাড়া মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, কমলগঞ্জ বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে হাওরাঞ্চলে।
চলমান এ বন্যায় চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলা-চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরে প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আমন বীজতলা সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর এবং আবাদ করা আমনের খেতের ক্ষতি ১ লাখ ২ হাজার হেক্টর। এ ছাড়া ২২ হাজার হেক্টর আউশ, সাত হাজার হেক্টর সবজি ও প্রায় তিন হাজার হেক্টর ফলের বাগানের ক্ষতি হয়েছে। নষ্ট হয়েছে আদা, হলুদ, পান, আখসহ অন্যান্য ফসলও।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা জেলা প্রশাসন কাজ করছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গম এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে সহায়তা আসছে। বিভিন্ন এলাকার মানুষ সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবীরা নিরলসভাবে কাজ করছে। বৃষ্টি না হলে আমাদের বন্যা পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হবে।