সুখী পুরুষের লক্ষণ কি মস্ত বড় একটা টাক না কি হৃষ্টপুষ্ট একটা ভুঁড়ি? সমীক্ষা বলছে, এই ভুঁড়ি যেন পুরুষদেরই সম্পত্তি। বয়স যত বেড়েছে, কারও ভুঁড়ি কলসি থেকে ক্রমশ জালার আকার ধারণ করেছে। এ ভুঁড়িকে অনেকসময় টাকা প্রাপ্তির সাথে সাথে সুখের লক্ষণ বলে ধরা হয়ে থাকে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই ভুঁড়ি আড়ে-বহরে বেড়ে ওঠে খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন এবং পরিবেশের জন্য। আপাত ভাবে নিরীহ দেখতে হলেও কিন্তু বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে যে কোনও সময়ে।
পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই ধরনের সমস্যার জন্য দায়ী মূলত হরমোন। হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে বিপাকহারজনিত সমস্যা দেখা দেয়। যার ফল পেট, কোমরে চর্বির মোটা স্তর। এ ছাড়া, শরীরে প্রোজেস্টেরন, ইস্ট্রোজেনের মতো হরমোনের হেরফের হলেও কিন্তু ইনসুলিনের কার্যকারিতা নষ্ট হয়। পুষ্টিবিদদের বক্তব্য, ভারতীয়দের খাবারের তালিকায় প্রোটিন কম, কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে। বিশেষ করে যাঁরা নিরামিষ খান, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি। কার্বোহাইড্রেট বেশি খেলে রক্তে ইনসুলিন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এবং তা সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। বরং তা শরীরে জমতে থাকে। দীর্ঘ দিন ধরে ইনসুলিন জমতে জমতে তা গ্লুকোজ় এবং পরবর্তী কালে মেদে পরিণত হয়।
আবার, বিপাকহার ভাল না হলে অন্ত্রে ভাল ব্যাক্টেরিয়ার ঘাটতি দেখা দেয়। যার ফলে অন্ত্রে গ্লুকোজ়ের বিপাকক্রিয়া থমকে যায়। অতিরিক্ত গ্লুকোজ় থেকেও পেটের তলদেশে মেদ জমার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সে কারণেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
নিয়মিত মদ্যপান করার অভ্যাসও রয়েছে অনেকের। অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় বেশি খেলে লিভারেও মেদ জমতে পারে। পেটের উপরের দিকে চর্বির পরত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফ্যাটি লিভারের উপসর্গ বলে ধরা হয়। মনের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়লেও কিন্তু হরমোনে হেরফের হতে পারে। পেটে মেদ জমার নেপথ্যে এটিরও ভূমিকা রয়েছে।
জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে না পারলে এই ধরনের সমস্যা বাড়তেই থাকবে। বয়সের সঙ্গে দায়দায়িত্বও বৃদ্ধি পায়। সব দিক সামলাতে গিয়ে অনেক সময়ে শরীরচর্চাও করা হয় না। যার ফলে ভুঁড়ির আকার বাড়তে থাকে। ডায়েট থেকে স্টার্চ, কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালোরিযুক্ত খাবার বাদ দিয়ে প্রোটিন খেতে হবে বেশি করে। সঙ্গে ফলমূল, শাকসব্জিও রাখতে হবে। এ ছাড়া, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল আয়ত্ত করতে পারলেও কাজ হবে।