
ঠিক কীভাবে বড় করলে ছেলেশিশুদের মধ্যে বিকাশজনিত ঘাটতি থাকবে না, তারা সংবেদনশীল ও মানবিক মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠবে, তা নিয়েই ধারণা থাকতে হবে অভিভাবকদের। শিশুর আচরণ নিয়ে অনেক সময়ই ধন্দে পড়ে যান অভিভাবকরা। কখন কোন কথা, কোন জিনিস যে তারা শিখে ফেলে, বোঝা দায়!
শিশুরা বাবা-মায়েদের দেখে শেখে। অনুকরণ করে। অভিভাবকের ভালো অভ্যাস ও আচরণ যেমন তাদের মধ্যে ইতিবাচক গুণের বিকাশ ঘটায়, তেমনই খারাপ অভ্যাসের প্রভাবও তাদের ওপরে পড়ে। সে কারণে দেখা যায়, মা-বাবার ভালো ও খারাপ— দুই আচরণই অজান্তে রপ্ত করে ফেলেছে আপনার সন্তান।
শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তারা চারপাশে যা দেখে, তা–ই শেখে। বিশেষ করে জেন্ডার রোল বা লিঙ্গভূমিকা শেখার ক্ষেত্রে ছেলেরা বাবা এবং পরিবারের অন্য পুরুষ সদস্যদের দেখে শেখে এবং মেয়েরা শেখে মাসহ পরিবারের অন্য নারী সদস্যদের দেখে। পরিবারে নারী ও পুরুষ সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক শিশুর মনস্তত্ত্বকে ব্যাপক প্রভাবিত করে। পরিবারে নারী ও পুরুষ সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বিভিন্ন বিষয়ে বা কাজে উভয় পক্ষের অংশগ্রহণ, আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুরা যেন শুধু পরিবারের পুরুষ সদস্যই নয়, সব সদস্যকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে পারে। একটি শিশু ‘প্রতিটি মানুষ গুরুত্বপূর্ণ’ ধারণা নিয়ে বেড়ে উঠলে নিজের পাশাপাশি অন্যদের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল থাকতে পারে। অন্যদিকে ‘আমি বেশি গুরুত্বপূর্ণ’ বা ‘আমি কম গুরুত্বপূর্ণ’—এমন আত্মমূল্যায়ন শিশুকে নিজের বা অন্যের প্রতি আগ্রাসী করে তুলতে পারে।
শিশু–কিশোরেরা যেন যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে জ্ঞান লাভ করে, সে ব্যাপারে অভিভাবকদের সজাগ থাকতে হবে। পর্নোগ্রাফি দেখা বা যৌনতা সম্পর্কে অসম্পূর্ণ, অবাস্তব ও বিকৃত ধারণা শিশু–কিশোরদের মনে যৌনতা সম্পর্কে ভীতি, অতি আগ্রহ বা যৌনবিকৃতির প্রবণতা তৈরি করতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর এসব তার যৌনজীবনকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তারা যেন যৌনতা সম্পর্কে ভুল ও বিকৃত বার্তা না পায়, সে ব্যাপারে অভিভাবককে সচেতন থাকতে হবে। পাশপাশি বয়স উপযোগী করে তাদের শরীর ও প্রজননস্বাস্থ্য সম্পর্কে শিক্ষা প্রদানে উদ্যোগ নিতে হবে। শিশু–কিশোরদের যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য সম্পর্কে বয়স উপযোগী তথ্য দিতে বিজ্ঞাননির্ভর বিভিন্ন বইয়ের সাহায্য নিতে পারেন অভিভাবকেরা।
বয়ঃসন্ধিতে বিভিন্ন রকম পরিবর্তন যেমন শারীরিক গঠনে পরিবর্তন, ঋতুস্রাব, স্বপ্নদোষ, প্রজনন অঙ্গের কার্যপ্রণালি ও পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব সম্পর্কে তাদের তথ্য দেওয়া দরকার। সেই সঙ্গে নিরাপদ ও পরস্পরের সম্মতিতে সম্পর্ক, গোপনীয়তা ও ব্যক্তিগত সীমারেখা সম্পর্কেও তাদের সচেতন করা জরুরি। ছেলেশিশুরাও যে যৌন হয়রানির শিকার হতে পারে, সে বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন থাকা দরকার। অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ থেকে সুরক্ষার উপায়গুলো মেয়েশিশুর পাশাপাশি ছেলেশিশুদেরও শেখানো জরুরি। যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য সম্পর্কে বয়স উপযোগী জ্ঞান শিশু–কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তনগুলো মোকাবিলা করতে যেমন সাহায্য করে, তেমনি অন্যকে নিপীড়ন করা থেকেও বিরত রাখে।