Top Newsরাজনীতি

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থেকে পদত্যাগের কারণ জানালেন সোহেল তাজ

মোহনা অনলাইন

দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ ২০০১ সালে প্রথম জাতীয় নির্বাচনে গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেও একই বছরের ৩১ মে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। চলে যান সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১২ সালের ৭ জুলাই সংসদ সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগ করেন। মাঝেমধ্যে সামাজিক কর্মকাণ্ডে উপস্থিত থাকলেও রাজনীতিতে আর যুক্ত হননি সাবেক এ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

শুক্রবার (৩০ আগস্ট) গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান তিনি।

তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ বলেন, ‘সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ ছিল অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে আমার প্রতিবাদ। সুতরাং একজন পদত্যাগ করার চেয়ে বড় প্রতিবাদ তো হতে পারে না। আমি নীরবে পদত্যাগ করে সরে গিয়েছিলাম, ম্যাসেজ তো ছিল।’

তিনি বলেন, ‘মর্নিং শোজ দা ডে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল আমার দল একটি নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিল, যেটার নাম ছিল দিন বদলের সনদ। দিন বদলের সনদটা ছিল এক্সাটলি আজকে ছাত্ররা যেটা নিয়ে আন্দোলন করছে এবং মুক্তিযুদ্ধ করে যে লাখ লাখ শহীদ রক্ত দিয়েছিলেন, সেই স্পিরিটটাই ছিল দিন বদলের সনদে।’

আমি এমন বাংলাদেশ চাই যেই বাংলাদেশের জন্য আজকে যুবসমাজ জেগে উঠেছে, ছাত্রসমাজ জেগে উঠেছে। এই বাংলাদেশ নিয়েই কিন্তু আমি গত ১৫ বছর ধরে কথা বলছি। কারণ আমিও রাজনীতিতে ঢুকেছিলাম এই বাংলাদেশ গড়ার জন্য। আর এটা কোন বাংলাদেশ? এটা হচ্ছে যে বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছিল, সেই বাংলাদেশ। একটি বাংলাদেশ যেখানে বৈষম্য থাকবে না। একটি বাংলাদেশ যেখানে সবার সমান অধিকার থাকবে। যেখানে সবার শিক্ষার অধিকার থাকবে। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে। এখানে গরিব, ধনী কারো মধ্যে ভেদাভেদ থাকবে না। সবার গণতান্ত্রিক অধিকার থাকবে। মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা হবে। এমন একটি বাংলাদেশ যেখানে আমরা সবাই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা মিলেমিশে বসবাস করব, সেটাই কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল। এটাই হচ্ছে আমারও বিশ্বাস।

আজকে যুব সমাজ-ছাত্র সমাজ যেটা করছে, এগুলো তারই মিলন। এটা আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষেরই এটা আশা-আকাঙ্ক্ষা। আমি খুবই আশাবাদী, এখন আশা বুকে ধারণ করে কঠিন কাজ করতে হবে। কারণ আমাদের কিছু কালচার তৈরি হয়েছে যেগুলো একেবারে নষ্ট, একেবারে পচা। আমাদের রাজনীতিক কালচারটা পচে গিয়েছে, ধসে গিয়েছে। এই কালচারটাকে ঠিক করতে হবে, এটা কিন্তু কঠিন কাজ। কারণ এটা ছড়িয়ে গেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। আমাদের মানুষ হিসেবে মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে যে, এই দেশটা আমাদের সবার। সবার দেশ হলে সবার কিছু দায়িত্ব আছে। সেই দায়িত্বগুলো হচ্ছে একজন ভালো নাগরিক হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা।

তার পদত্যাগে একজন রাজনৈতিক নেতার প্রভাব খাটানোর বিষয়ে সোহেল তাজ বলেন, ‘এটা একেবারেই ঠিক না। এরকম কোনো ঘটনাও ঘটেনি যে আমার ওপরে কেউ আক্রমণ করবে, এরকম হয়নি। এটা কে বা কারা এটা বলেছে জানি না। আমি সার্বিকভাবে পলিসি এবং যেভাবে কাজ চলছিল সেটার প্রতিবাদে চলে গিয়েছি। এখানে আরো কিছু বিষয় আছে। আমি মনে করেছি আমার যে ক্যাপাবিলিটি সেই অনুযায়ী আমি কাজ করতে পারছিলাম না, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছিলাম না। কারণ আমি উদ্যোগ নিয়েছিলাম দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করব, আমি উদ্যোগ নিতে চেয়েছিলাম প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ কেন্দ্র থাকবে। আমি উদ্যোগ নিতে চেয়েছিলাম পুলিশকে একটি প্রফেশনাল ডিসিপ্লিন ফোর্স হিসাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করব। আমার অনেক পরিকল্পনা ছিল। যখন দেখলাম সেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব না তাই আমি সরে গেছি।’

তিনি আরও বলেন, আমার এই মুহূর্তে রাজনীতিতে আসার কোনো ইচ্ছে নেই। আমি কোনো পরিকল্পনাও করিনি। আমার প্রিয় একটা টপিক সেটা হচ্ছে স্বাস্থ্য। কারণ আমি মনে করি একটা মানুষের জীবনে স্বাস্থ্য সবচেয়ে বেশি মূল্যবান। আমি নতুন প্রজন্মের কাছে এটা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। নিজেকে একজন ভালো মানুষ, শুধু শারীরিকভাবে না মানসিকসহ সার্বিকভাবে গড়ে তুলতে হবে। স্বাস্থ্য এটার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমি মনে করি এটাও একটা সার্ভিস।

আমার মূল বিশ্বাস, আমরা যে যেখানে আছি বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে আমরা আমাদের নিজেদের অবস্থান থেকে কিছুটা অবদান রাখতে পারি। অবদান রাখতে রাজনীতিই যে করতে হবে সেটা আমি বিশ্বাস করি না। আমরা যে যেখানে আছি, সাংবাদিকরা তাদের পবিত্র দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করলে তারাও দেশের জন্য কিছু করতে পারবে। যিনি রাষ্ট্রের কাজ করছেন তিনি সঠিকভাবে দুর্নীতি না করে, অনিয়ম না করে তার দায়িত্ব পালন করলে তিনিও কন্ট্রিবিউট করছেন দেশের জন্য। একজন ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া ঠিকভাবে করে নিজেকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুললে সেও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য অবদান রাখছে। আমরা যে যেখানে আছি বাংলাদেশের জন্য অবদান রাখতে পারি। সেটা আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস।

author avatar
Online Editor SEO
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button