আজ ১ সেপ্টেম্বর বিশ্ব চিঠি দিবস। এখন চিঠির প্রচলন কমে গেলেও আগে এই চিঠি ছিল যোগাযোগের প্রধানতম মাধ্যম। চিঠি লেখেননি এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কেউ লিখেছেন পরিক্ষার খাতায় আবার কেউবা লিখেছেন প্রিয় মানুষকে। কালের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চিঠি লেখার মাধ্যমেরও পরিবর্তন হয়েছে।
এখন মনে চাইলেই টুক করে একটা মেসেজ পাঠিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু আগে কোনো খবর দূরে কাউকে জানানোর জন্য বেশ সময় লাগত। কখনো গুনতে হতো দিন, কখনোবা মাস। তবে যা–ই বলো, চিঠি পাওয়ার মতো আনন্দের সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা হয় না। চিঠি পেলে আমাদের আনন্দের সীমা থাকে না। চিঠিকে বহু সাহিত্যিক তুলনা করেছেন শিল্পের সঙ্গে, অনেক গীতিকার চিঠি নিয়ে লিখেছেন গান। ‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’। যুদ্ধের ময়দান থেকে শুরু করে বন্ধুত্ব, প্রেম কিংবা দাপ্তরিক কাজ, কোথায় ছিল না চিঠি? তবে আজ যে চিঠি আর সেভাবে নেই, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। এই হারিয়ে যাওয়া শিল্পকে ধরে রাখতে তাই প্রতিবছর ১ সেপ্টেম্বর পালিত হয়ে আসছে ‘আন্তর্জাতিক চিঠি দিবস’।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালে সর্বপ্রথম অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক রিচার্ড সিম্পকিনের হাত ধরেই এই দিবসের প্রচলন শুরু হয়।
মূলত, চিঠি লেখার ঐতিহ্য একসময় ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির আগ্রাসনে এই চর্চা ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে। একসময় মানুষ চিঠি লিখে নিজেদের মনের ভাব, অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করতেন। চিঠির মাধ্যমে ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো আরও ঘনিষ্ঠ এবং গভীর হতো। একটি হাতের লেখা চিঠি ছিল ব্যক্তিগত স্পর্শের প্রতীক, যা আজকের ডিজিটাল বার্তায় পাওয়া যায় না।
অপরদিকে প্রিয়জন ও পরিজনের কাছে লেখা প্রতিটি চিঠিই ছিল চিন্তাশীলতা ও ধীরগতি মিশ্রণ। চিঠি লেখার প্রক্রিয়াটি ছিল মন্থর এবং চিন্তাশীল। চিঠি লিখতে গেলে মানুষকে তার চিন্তাগুলোকে সুন্দরভাবে সাজাতে হতো। ধীরে ধীরে সেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের অভিজ্ঞতা এবং চিন্তাভাবনার গভীরতা ফুটে উঠতো। এছাড়া প্রাচীন চিঠিগুলো শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয় বরং ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকেও মূল্যবান ছিল। অনেক ক্ষেত্রে চিঠি ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর সাক্ষী ছিল এবং এই চিঠিগুলো আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বিবেচিত হত। অনেক প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বের চিঠি আজও ইতিহাসবিদদের জন্য মূল্যবান দলিল হিসেবে কাজ করছে।
ঘোড়ার ডাক প্রচলনের আগে কীভাবে চিঠি আদান-প্রদান হতো, তা নিয়ে দ্বিমত থাকলেও আজকাল দাপ্তরিক কাজের নথি বা আবেদনপত্র ছাড়া কেউ ডাকঘরে যে যায় না, সেটা সবারই জানা। অথচ অনেক দশক আগেও দূরে থাকা আপনজনের সঙ্গে যোগাযোগের একটি মাধ্যমই ছিল চিঠি। শুধু দূরে নয়, খুব কাছের মানুষকেও মুখে বলতে না পারা কথাগুলোও সযত্নে সাজিয়ে জানাতেন চিঠিতে। এক একটি চিঠিতে নানান গল্প ও ইতিহাস বহন করত।
তবে বর্তমানে ই-মেইলে আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের খুদে বার্তার ভিড়ে কাগজের চিঠি হারিয়ে গেছে। ছোট ছোট বাক্যে, কাটছাঁটকৃত শব্দে বিন্যস্ত এই যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ভাষাবিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন ‘টেক্সটস্পিক’। কারও সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন হলেই, চট করে বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে ইনবক্সে পাঠানো যায়।
আবেগ এখন আর শব্দে প্রকাশ পায় না । আবেগ বোঝাতে মেসেঞ্জার বা হোয়াটস্যাপে ইমোজি পাঠানো হয়। তবে আজ রোববার (১ সেপ্টেম্বর) না হয় চিঠি দিবসকে কেন্দ্র করে কাগজ-কলমে আপনজনকে মনের কথাগুলো চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দিতে পারেন।