Top Newsজাতীয়

অন্তর্বর্তী সরকারের ১ মাস: একনজরে

মোহনা অনলাইন

ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস পূর্ণ হলো আজ। ৫ আগস্ট হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। পরে এই সরকারে যোগ দেন আরও চার উপদেষ্টা।

নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস গত ৮ আগস্ট শপথ নেওয়ার পর প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য একটি রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার ‘গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের’ মাধ্যমে তাদের ‘ম্যান্ডেট’ পূরণ করতে একটি ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন অনুষ্ঠান করাই তাদের লক্ষ্য। খবর বার্তা সংস্থা ইউএনবির।

সবমিলিয়ে ২১ সদস্যের এই সরকারের পথচলার আজ এক মাস পূর্তি হলো। এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্যোগ দেশের ১২টি জেলায় বয়ে যাওয়া বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন ড. ইউনূস এবং তাঁর সরকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রথম এক মাসে সরকারের নেওয়া অনেক পদক্ষেপই ইতিবাচক। এই এক মাসের মধ্যেই নতুন সরকার প্রশাসনের শীর্ষপদে ব্যাপক রদবদলের কাজে হাত দিয়েছেন, যা এখনও চলমান। আর্থিক খাতের সংস্কারের অংশ হিসেবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। এটা সুশাসনের ইঙ্গিত বহন করে। ড. ইউনূস বলেছেন, তিস্তা চুক্তির বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবেই ভারতের সঙ্গে কথা বলবেন। চলতি সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও যোগ দিচ্ছেন তিনি।

মানবাধিকার ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুমবিরোধী কনভেনশনে স্বাক্ষর করে। এই কনভেনশনে যোগদানের উদ্দেশ্য হলো জোরপূর্বক গুম হওয়া থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির সুরক্ষা এবং বলপূর্বক গুমের প্রতিটি ঘটনা তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের সাজা নিশ্চিত করা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন সবার জন্য স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখায় জনগণের আকাঙ্খা পূরণের ৯টি মূল মানবাধিকার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, সরকার সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার করতে সুশাসন এবং দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দিয়ে শক্তিশালী ও সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। সেই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ পেয়েছে একজন নতুন গভর্নর। ড. আহসান এইচ মনসুর ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক সংস্কার করছেন, যা এখনও ভঙ্গুর অবস্থায় রয়ে গেছে। অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে একটি বিস্তৃত ‘শ্বেতপত্র’ প্রণয়নের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো এবং এসডিজির জন্য নাগরিক প্ল্যাটফর্মের বাংলাদেশের আহ্বায়ক।

উপদেষ্টা পরিষদ গত সপ্তাহে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। ৫ আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে পতন ঘটানো ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে এই ‘জুলাই বিপ্লব স্মৃতি জাদুঘর’ করা হচ্ছে। আগামী নির্বাচনের পর ক্ষমতায় ফেরার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো এই সিদ্ধান্তকে কীভাবে দেখছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

এছাড়া কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার প্রায় সব অংশীদারের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক বজায় রাখছে। তবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানের ইস্যুতে ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে উত্তেজনার লক্ষণ রয়েছে।

অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেছেন, শেখ হাসিনা ভারত থেকে রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া ‘বন্ধুত্বহীন প্রকাশভঙ্গি’। ঢাকা শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ না করা পর্যন্ত উভয় দেশের মধ্যে অস্বস্তি এড়াতে তাকে অবশ্যই নীরব থাকতে হবে।

অন্যদিকে, পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে শিগগিরই একটি উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্‌তী সরকারের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন ১৯৮ জন বিশ্বনেতা। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ ৯২ জন নোবেলজয়ী। ইতোমধ্যেই জাতির সামনে ভাষণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে তিনি আগামীর রাষ্ট্র পরিচালনার রোডম্যাপ দিয়েছেন।

author avatar
Online Editor SEO
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button