ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্থিক খাতের গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্যানুসারে বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রতি বছর ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার বা ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
জিএফআই সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালেই বাংলাদেশ থেকে চার হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার বা সোয়া চার লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। দুর্নীতিবাজদের পাকড়াও ও পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বসে নেই দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধের একমাত্র সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
পাচারকারীদের পাকড়াও করতে ও পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে বেশ জোরেশোরেই কাজ শুরু করেছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় ২০০ ভিআইপি ব্যক্তির বিরুদ্ধে গোপন ও প্রকাশ্যে অনুসন্ধানে নেমেছে। যার মধ্যে রয়েছে তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সাবেক এমপি, ব্যবসায়ী, পুলিশ ও আমলাদের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজ আরও নিখুঁত করতে এবং সরকার গঠিত টাস্কফোর্সে কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত দেশি-বিদেশি সহায়তা নিতে যাচ্ছে সংস্থাটি। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) লিগ্যাল অ্যাটাচে রবার্ট ক্যামেরুন ও এফবিআইয়ের সুপারভাইজার স্পেশাল এজেন্টের সমন্বয়ে একটি টিমের সঙ্গে সোমবার বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দলটি দুদকের মানি লন্ডারিং ও লিগ্যাল শাখার মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশেষ সভা করবে।
সভায় আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, এফবিআইয়ের সঙ্গে আলোচনার প্রধান বিষয় হচ্ছে যৌথ টাস্কফোর্স। ওই টাস্কফোর্স কীভাবে কাজ করলে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হবে, আমরা এ বিষয়ে তাদের সহযোগিতা চাইব। দুদকের সঙ্গে এফবিআইয়ের সভা নতুন নয়। তবে এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। এফবিআইয়ের সঙ্গে একটি এমওইউ স্বাক্ষর করার জোড় প্রচেষ্টা থাকবে।
তিনি বলেন, যৌথ টাস্কফোর্সে তাদের সরাসরি অংশগহণ থাকবে কিনা, সে বিষয় নিয়েও আলোচনা হবে। তারা পরামর্শক হিসেবেও থাকতে পারে। সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তাদের সঙ্গে আলোচনার পর বিষয়টি পরিষ্কার করা যাবে।
এদিকে রবিবার সকালে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে টাস্কফোর্স গঠন করার কথা জানিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সভা শেষে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, টাস্কফোর্সের কর্মপদ্ধতি কী হবে, কারা থাকবে, এর প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ চলছে। কিছুদিনের মধ্যে এই টাস্কফোর্স দৃশ্যমান হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ব্যাংক খাতের সংস্কারে আলাদা টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।
টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও দুদক সূত্রে জানা যায়, সরকারের বিশেষ টাস্কফোর্সে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন, অর্থ বিভাগ, এনবিআর, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ইত্যাদি সংস্থার প্রতিনিধিরা থাকছেন। যদিও টাস্কফোর্সে সংস্থাগুলোর কোন কোন কর্মকর্তা থাকছেন, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
এর আগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের আবাসিক আইন উপদেষ্টা এরিক অপেঙ্গারের সঙ্গে দুদকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
ওই বৈঠকে পাচার হওয়া অর্থ প্রত্যর্পণ ও কমিশনের নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। যেখানে গুরুত্ব পেয়েছিল- দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত বিশেষ করে মানিলন্ডারিং, সাইবার ক্রাইম, আর্থিক লেনদেনের তদন্তের ক্ষেত্রে ফরেনসিক এনালাইসিস, ট্রেডবেইজড, মানিলন্ডারিং, অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল, সম্পদ পুনরুদ্ধার, তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে সংঘটিত আর্থিক ক্রাইম, মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল এ্যসিস্টেন্স, তথ্য বিনিময়সহ বিভিন্ন ইস্যু।