আজ সোমবার ১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। ৫৭০ সালের এই দিনে মানব জাতির জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আরবের মক্কা নগরীর সভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের উদ্যোগে ১৫ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সারা দেশে সরকারি ছুটি। এ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জশনে জুলুসমুখী জনতার ঢল নেমেছে।
বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সিলেটে বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করেছে। ‘মুবারক র্যালি’ নামে এই র্যালিতে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা অংশ নেয়।
রবিবার দুপুরে মহানগরীর সোবহানীঘাট এলাকার শাহজালাল দারুচ্ছুন্নাহ ইয়াকুবিয়া কামিল মাদরাসা থেকে র্যালিটি শুরু হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক পদক্ষিণ করে। এসময় প্রিয়নবীর শানে রচিত কালজয়ী নানা কবিতার শ্লোক অঙ্কিত নানা রঙের ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড র্যালিতে শোভাবর্ধন করে। ছাত্রজনতার সুরে সুরে ধ্বনিত হয় প্রিয়নবীর প্রশংসাগীতি। র্যালিতে বালাগাল উলা-বি কামালিহি… শামছুদ্দুহা আসসালাম… এরকম নাতে রাসুল পরিবেশন করা হয়।
র্যালি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক এস এম মনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব হোসাইন আহমদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন মুফতি গিয়াস উদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, মাওলানা কমরুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, বাংলাদেশ আনজুমানে আল-ইসলাহ মহাসচিব মুফতী একেএম মনোওর আলী, তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহবুবুর রহমান ফরহাদ, আল-ইসলাহ সাংঠনিক সম্পাদক মাহমুদ হাসান চৌধুরী, ড. মঈনুল ইসলাম পারভেজ, তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন, আল-ইসলার প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা নজমুল হুদা মাওলানা আবু জাফর মুহাম্মদ নুমান, মুফতী বেলাল আহমদ, মাসিক পরওয়ানা সম্পাদক রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ফখরুল ইসলাম, মনজুরুল করিম মহসিন, মুহাম্মদ উসমান গণি, সোলায়ান আহমদ চৌধুরী, জাহেদুর রহমান, আতিকুর রহমান সাকের প্রমুখ।
এদিকে কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ মোটরসাইকেলে আবার কেউ ট্রাক কিংবা পিকআপের ওপর চেপে জুলুসে অংশ নিতে ছুটছেন চট্টগ্রামের মুরাদপুরের দিকে। ইয়া নবী সালাম আলাইকা মুখে ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুসে অংশ নিচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধরাও। সকাল থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা থেকে জুলুসে অংশ নিতে এসেছেন অনেকে।
নগরীর মুরাদপুর, ষোলশহর, দুই নম্বর গেইট, চকবাজার, অক্সিজেন, বায়েজিদ, জিইসি মোড়, টেকনিক্যাল মোড়, মোহাম্মদপুর, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্নভাবে এলাকায় জুলুসে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের পদচারণায় তিল ধারনের ঠাঁই নাই।
জুলুস উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সেজেছে চট্টগ্রাম। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে তোরণ। সাঁটানো হয়েছে ব্যানার-ফ্যাস্টুন। সড়কের দুপাশে বিশেষ পতাকাও পুঁতে দেওয়া হয়েছে। বসেছে খাবারসহ বিভিন্ন আইটেমের অস্থায়ী দোকানও। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে স্বেচ্ছাসেবীরা বিতরণ করছেন শরবত। পুরো এলাকায় বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন। একই সঙ্গে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা কাজ করছেন।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, জুলুসের নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে উন্নত খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে—ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, সেমিনার, ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আরবি খুতবা লিখন প্রতিযোগিতা, ক্বিরাত মাহফিল, হামদ-না’ত, স্বরচিত কবিতা পাঠের মাহফিল, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, ইসলামী বইমেলা, বিশেষ স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ।