স্মার্টফোন বিস্ফোরণ! আজকাল হরহামেশাই ঘটছে এ ধরনের ঘটনা। আশ্চর্য্যের বিষয় হলো আপনার কাজে সাহায্যের পরিবর্তে, কখন যে এই ডিভাইস টাইম-বোমে পরিণত হবে, তা বলা এখন সত্যি মুশকিল।
সম্প্রতি (২৭ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার) ময়মনসিংহ নগরে এক ডাক্তার মোবাইল ফোন বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। নিহত ডাক্তারের নাম তারিকুল আলম (৪২)। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি নগরের গরিব জমির মুন্সি এলাকার মৃত তাহের উদ্দিনের ছেলে।
পরিবারের লোকজন ও পুলিশের বরাতে জানা গেছে, রাত একটায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিনের মতো ডিউটি শেষে বাসায় ফেরেন ঐ চিকিৎসক। পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরক্ত না করে তিনি আলাদা একটি কক্ষে একা ঘুমাতে যান। বিছানার পাশে রাখা মাল্টিপ্লাগে নিজের মোবাইল ফোন চার্জ দিয়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন।
ভোর চারটার দিকে মোবাইল ফোনটি বিস্ফোরিত হলে দগ্ধ হন ঘুমন্ত তারিকুল। এতে তাঁর দুই হাত, বুক, নাক-মুখ পুড়ে যায়। এদিকে পোড়া গন্ধ আর আওয়াজ পেয়ে পরিবারের লোকজন দরজা খুলে তারিকুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
বিষয়টি নিয়ে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশনগুলোর সংবাদ প্রতিবেদনেও এমন তথ্য উঠে এসেছে। ওসির বরাত দিয়ে গণমাধ্যমগুলো লিখেছে, “মোবাইল ফোনটি চার্জে থাকা অবস্থায় বিস্ফোরিত হয়ে শরীরে আগুন ধরে যায়। তবে কী কোম্পানির মোবাইল ফোন ছিল, তা জানা যায়নি। পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
আর এভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ না থাকার কারণে উঠে আসে না মুঠোফোন বিস্ফোরণের আসল কারণ। আর প্রতিবারই ধরাছোড়ার বাইরে থেকে যায় মোবাইলফোন কোম্পানি ও তাদের প্রযুক্তি দুর্বলতা।
বিস্ফোরিত মুঠোফোন কোম্পানির নাম জানতে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম খান ফোন করা হলে তিনি ডিজিটাল বার্তাকে জানান, “বিস্ফোরিত মোবাইল ফোনটি চায়না ব্র্যান্ড অপো কোম্পানির। স্মার্টফোনটির চার্জার বিস্ফোরন থেকে এমন ঘটনা ঘটেছে।”
এর আগে তারিকুলের মতো অপো মোবাইলফোন বিস্ফোরণে একজন অটোগাড়ি চালকের এক পা পুড়ে যায় এবং এক পা ভেঙ্গে যায়। ফোনটি বিস্ফোরিত হওয়ার সময় তিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ঐ মুহূর্তে অপো মোবাইলটি গরম হতে শুরু করে, তখন তিনি ফোনটি পকেট থেকে বের করার চেষ্টা করেন এবং সেই মুহূর্তেই বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের কারণে তিনি সড়ক দুর্ঘটনার সম্মুখীনও হন। এই পুরো ঘটনার জেরে, ব্যক্তিটির একটি পা পুড়ে যায়, আর অন্য পা ভেঙে গিয়েছিল।
জানা গেছে, এ ব্যাপারে অপো কর্তৃপক্ষ ব্যবহারকারীকে কোন ক্ষতিপূরণ দেয়নি।
বিশেজ্ঞরা বলছেন, স্মার্টফোনের সব অংশ বিস্ফোরণের জন্য দায়ী নয়। মূলত এর ব্যাটারিটিই বিস্ফোরিত হওয়ার ঘটনা বেশি চোখে পড়ে। বাকী যন্ত্রাংশ আসলে বিস্ফোরিত হওয়ার মত তেমন কিছু দিয়ে তৈরি নয়। যেসকল স্মার্টফোনগুলি উৎপাদন প্রক্রিয়া চলাকালীন একাধিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায় না, ব্যাটারি বা অন্য কোনও উপাদান সর্বদা ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে, যার ফলে স্মার্টফোনটি বিস্ফোরিত হতে পারে।
এতো বেশি বিস্ফোরনের ঘটনা দেখে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতেই পারে তাহলে কি অপো কোম্পানি মানহীন স্মার্টফোন ও যন্ত্রাংশ বাজারে ছাড়ছে? ব্যবসায় মুনাফা অর্জনের জন্য দেশের বাজারে রিফারবিস স্মার্টফোন ও চার্জার বিক্রয় করছে কি? বিষয়টি সত্যতা নিরুপণে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ও সংশ্লিষ্টদের কর্তৃপক্ষের নজরদারি আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও গ্রাহকরা।
বিগত কয়েক বছর ধরে অপোসহ বিভিন্ন মোবাইল ফোনে এমনই বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের ঘটনা সামনে এসেছে। এরমধ্যে অপো স্মার্টফোনের মান নিয়ে শতশত অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের। কেউ বলছেন কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয় ডিসপ্লে সমস্যা, কারও অভিযোগ ঘনঘন হ্যাং করে, চার্জ থাকছে না, কেউ বা জানাচ্ছেন ক্যামেরার সমস্যার কথা।
অপো স্মার্টফোন নিয়ে এমন শতশত অভিযোগ মিলছে গ্রাহকদের।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, গ্রাহকরা ঠকছেন অপো স্মার্টফোন কিনে। সেই সঙ্গে টাকা দিয়ে যেনো ভোগান্তি কিনে নিচ্ছেন তারা।
অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে অপো ব্র্যান্ড সংশ্লিষ্টদের একাধিক বার ফোন করা হলে তারা ফোনের কোন জবাব দেন নি। এখন দেখার অপেক্ষা অন্তবর্তীকালীন সরকার এসব মানহীন মোবাইল ফোন ও যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করে।