শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত নদ-নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৮৮-এর বন্যার চেয়েও এবার ভয়াবহ বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। এছাড়া লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
গত ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া বন্যায় এ পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অনেকেই নিখোঁজ রয়েছে। রোববার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় বন্যার্তরা দুর্ভোগে পড়েছেন। সর্বশেষ ৫ অক্টোবর সকাল থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধারকাজে যুক্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে শনিবার সকাল থেকে নতুন করে শেরপুর সদর এবং নকলা উপজেলার আরও ৬টি ইউনিয়ন পানিতে প্লাবিত হয়েছে। নতুন নতু আরও এলাকার প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় শেরপুরের মহারশি, সোমেশ্বরী, চেল্লাখালি, ভোগাই ও মৃগী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে শেরপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত শেরপুরের ৫টি উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আর পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ।
এছাড়া বন্যায় নালিতাবাড়ী উপজেলায় পাঁচজন ও ঝিনাইগাতীতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শেরপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রনব কুমার কর্মকারের দেয়া তথ্য মতে, শুধু ঝিনাইগাতী এবং নালিতাবাড়ী উপজেলায় ২ হাজার ৫৭টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিক হিসাবে ১১ কোটি টাকার বেশি। আর কৃষি অফিসের তথ্য মতে, জেলার অন্তত ৩০ হাজার হেক্টর আমন আবাদ এবং এক হাজার হেক্টর সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে অন্তত ৭০হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
শেরপুরের যে সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলে হয়েছে সে স্কুলগুলোকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রেজয়ানকে বলেন, আশ্রয়কেন্দ্র খোলে বিদ্যালয়গুলোতে আগামী বন্ধ থাকবে যেসব এলাকায় পানি নেই সেখানে রেগুলার ক্লাস চলবে। কতগুলো বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে সে সংখ্যাটি আজ বিকেল জানা যাবে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, এবারের বন্যা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। অনেকেই বলেছেন— ’৮৮-এর বন্যার চেয়েও এবার ভয়াবহ। মাছের খামারিরা বলছেন, তাদের খামারের মাছ ভেসে যাওয়ায় তারা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। অনেক স্থানে পাহাড়ি ঢলের পানির প্রবল তোড়ে ভেঙে গেছে ঘরবাড়ি, গাছপালা। পানি উঠায় অনেকের বাড়িতে চুলা জ্বলছে না। তাই রান্নাবান্না-খাওয়াদাওয়া বন্ধ রয়েছে। বন্যাকবলিত পরিবারগুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় অনেকে নিরাপদ স্থানে ও আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন। পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারের জন্য কাজ করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, জেলার বেশ কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। দুর্গতদের উদ্ধারে ও শুকনো খাবার পৌঁছে দিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। একইসঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাচ্ছি।