ভয়াবহ বন্যায় পানির তীব্র স্রোতের সঙ্গে ভেসে গেছে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার বেশীরভাগ বাড়িঘর। এক মাস আগে যখন বাড়িতে বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করে তখন ফেনীর ফুলগাজীর মুন্সীরহাট ইউনিয়নের নোয়াপুর পাল গ্রামের বাসিন্দা বিউটি রাণী পাল তার সাত বছরের ছেলে ও মাকে নিয়ে প্রতিবেশীর দোতলা বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে জীবন বাঁচিয়েছিলেন।
কিন্তু কিছুদিন পর পানি কমলে বাড়ি ফিরে এসে দেখেন একমাত্র ঘরটিতে থাকার মত অবস্থা নেই। বিউটি বলেন, তার স্মামীর উপার্জনে যা হয় তা দিয়ে ‘দিন আনি দিন খাই’ অবস্থা। তারপরও হাতে যে টাকা ছিল সেটা বন্যার মধ্যে কোনো কাজকর্ম না থাকায় শেষ হয়ে গেছে। এখন একেবারে শূন্য। ফলে ঘরটি আর সংস্কার করতে পারেননি।
বিউটি বলেন, “ভয়াল বন্যায় একমাত্র বসতঘরটি ভেঙে পড়ে যায়। এখন বাঁশ দিয়ে কোনোমতে ঠেক দিয়ে রেখে আপাতত অন্যের ঘরে থেকে দিনাতিপাত করছি। নতুন করে ঘর করার মতো টাকা হাতে নেই।” পানির তীব্র স্রোতের কারণে ঘরের কোনো মালামালই রক্ষা করতে পারেননি বিউটি। বন্যায় ভেসে গেছে তাদের হাঁস-মুরগীও। বন্যার এমন পানি জীবনেও দেখিনি। আমার বাপ-দাদারাও কোনোদিন এত পানি দেখেনি।
তার মত একই অবস্থা ফুলগাজী উপজেলার জগতপুর এলাকার আসমা আক্তারের। তিনি বলেন, অনেক বেশি সম্পদ না থাকলেও সন্তানদের নিয়ে ভালোভাবেই কাটছিলো সংসার। তবে আকস্মিক বন্যায় আমাদের আর কিছুই বাকি নেই। এতদিন ধরে অনেকে খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেছে। অনেকে ঘরের জন্য নাম নিয়েছে। তবে এখনো ঘর পাইনি।
তমিজউদ্দিন নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, বেড়িবাঁধের পাশে একটি মুদি দোকান করে পরিবার নিয়ে কোনোমতে জীবনযাপন করতাম। বন্যার পানির স্রোতে সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে আসলেও এখনো ঘরে ঢুকতে পারিনি। পরিবার নিয়ে এক চাচাতো ভাইয়ের বাড়ির ছাদে বসবাস করছি।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, বন্যায় ফেনীতে ৮ হাজার ৯৫টি কাঁচাঘর, ২৫০টি আধাপাকা ঘর সম্পূর্ণ ধ্বসে যায়। এতে আনুমানিক ক্ষতি হয়েছে ১৬৩ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ৫৩ হাজার ৪৩৩টি কাঁচাঘর এবং ২ হাজার ৬৩২টি আধাপাকা ঘরের আংশিক ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ৩৭০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে ৬৪ হাজার ৪১৫টি ঘরবাড়িতে মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৫৩৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক পরিবার প্ল্যাটফর্মের স্বেচ্ছাসেবক ওসমান গনি রাসেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে এখন পর্যন্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগ, বিভিন্ন এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনই একমাত্র ভরসা। সরকারের ত্রাণ তহবিল বা টিএসসির গণত্রাণের অর্থ দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও ফেনী আসেনি। সংশ্লিষ্টরা যদি এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেন মানুষগুলো অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবে।
তমিজউদ্দিন নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, বেড়িবাঁধের পাশে একটি মুদি দোকান করে পরিবার নিয়ে কোনোমতে জীবনযাপন করতাম। বন্যার পানির স্রোতে সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে আসলেও এখনো ঘরে ঢুকতে পারিনি। পরিবার নিয়ে এক চাচাতো ভাইয়ের বাড়ির ছাদে বসবাস করছি।
এ ব্যাপারে ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ২০ হাজার বান্ডেল টিন ও নগদ ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এছাড়া বেসরকারিভাবে যেসব প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন পুনর্বাসনে সহায়তায় এগিয়ে এসেছে তাদের কাজগুলো প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমন্বয় করা হচ্ছে।