সাধারণত মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরি হলেও প্রতিবছরই দুর্গাপূজায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যতিক্রমী নানা সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। শারদীয় দুর্গাৎসবকে ঘিরে এবার নাটোরে ব্যতিক্রমী ধান দিয়ে একটি দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। একটি একটি করে ধান গেঁথে দুর্গা প্রতিমাটি তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় ২০ দিনের মতো।
এই প্রতিমাগুলো তৈরি করা হয়েছে ৫০ কেজি ধানের শৈল্পিক কারুকাজে। দর্শনার্থীরা বলছেন, সোনালি রঙের ধান দিয়ে তৈরি প্রতিমাগুলো দেখে যেনো মনে হচ্ছে সোনা দিয়ে মোড়ানো। ছোট ছোট ধান বসানো হয়েছে পুঁতির মতো। দেখতেও লাগছে অপরূপ।
অনেক বছর আগে থেকে স্বর্গীয় নিমাই চন্দ্র পাল নাটোর শহরের লালবাজারে প্রতিমা তৈরির একটি কারখানা গড়ে তোলেন। তাঁর হাতের তৈরি প্রতিমার বেশ কদর ছিল বেশ। নিখুঁত হাতে চমৎকার ভাবে প্রতিটি প্রতিমাকে শিল্পকর্মের মাধ্যমে সাজিয়ে তুলতেন তিনি। ফলে নাটোর জেলার বাইরেও তার হাতের তৈরি বিভিন্ন দেবীর প্রতিমার বেশ চাহিদা ছিল। তার মৃত্যুর পর অল্প পরিসরে প্রতিমা তৈরির কাজ করেন তার ছেলে বিশ্বজিৎ পাল এবং ছোট ভাই গোপাল চন্দ্র পাল।
শহরের লালবাজার এলাকার বিশ্বজিৎ পাল ও তার কাকা গোপাল চন্দ্র পাল ধান দিয়ে এই প্রতিমা তৈরি করে রীতিমত সাড়া ফেলেছেন। কেননা, হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজা এলেই সাধারণত কাঁদা-মাটি দিয়ে তৈরি করা হয় প্রতিমা। এ প্রতিমাটি শহরের লালবাজার কদমতলার রবি সূতম সংঘের পূজা মণ্ডপে যাবে। সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ পূজা-অর্জনা শেষে প্রতিমা বিসর্জন দেবেন। ইতোমধ্যে ধান দিয়ে তৈরি প্রতিমা দেখতে ভিড় করছেন ভক্ত ও উৎসুক জনতা। তারা বলছেন, ধান দিয়ে তৈরি প্রতিমা আগে কখনও দেখেননি। তাদের দাবি এটিই দেশের প্রথম ধানে তৈরি প্রতিমা।
প্রতিমা তৈরির কারিগর বিশ্বজিৎ পাল জানান, তার বাবা স্বর্গীয় নিমাই চন্দ্র পালের কাছে প্রতিমা বানানো শেখেন তিনি। দেশের মধ্যে এই প্রথম ধান দিয়ে দুর্গাদেবীর প্রতিমা তারাই তৈরি করেছেন। তবে প্রায় এক যুগ আগে ধান দিয়ে একটি স্বরসতীর প্রতিমা তৈরি করেছিলেন। সেই ধারণা থেকে এবারের দুর্গা প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সবাই তো নতুনত্ব চায়। তাই সেই চিন্তা থেকে এ বছর ধান দিয়ে ১১ ফুট উচ্চতার দুর্গা দেবীর প্রতিমা বানিয়েছি। আগামী বছর আরও বড় করে প্রতিমা তৈরির ইচ্ছা রয়েছে। আশা করছি, ধান দিয়ে দুর্গা দেবীর প্রতিমা সবার নজর কাড়বে। আগামীতে ধান দিয়ে বানানো দেবীর প্রতিমার সংখ্যাও বাড়বে।