ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলায় সৃষ্ট বন্যায় পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে ৩৩ হাজার পরিবার। এই অবস্থায় দুর্গতদের উদ্ধারকাজের পাশাপাশি চলছে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুর ১টায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সূত্রমতে, বন্যা দুর্গত এলাকাগুলোর মধ্যে হালুয়াঘাট উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ভূবনকূড়া, জুবলী, কৈচাপুর, সদর, গাজীরভিটা ও পৌর এলাকার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে ধারা, ধূরাইল, নড়াইল, সাখুয়াই, আমতৈল ও বিলডোরাসহ মোট ৬টি ইউনিয়নে। এতে এই উপজেলায় বতর্মানে ১৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদুল আহমেদ।
একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী ধোবাউড়া উপজেলার। এই উপজেলার মোট ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে গামারীতলা, ঘোঁষগাঁও ও দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নে কমেছে বন্যার পানি। তবে এই উপজেলা সদর, গোয়াতলা, পোড়াকানদলিয়া ও বাগবেড়সহ ৪টি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৯ হাজার পরিবার এখনও পানিবন্দি রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন।
এছাড়া ফুলপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম আরিফুল ইসলাম জানান, সিংহেশ্বর, ছনধরা ও সদর ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানি ভাটির দিকে নেমে আসায় বর্তমানে ফুলপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ৫ হাজার একশ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ১৭ হাজার।
জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, বন্যা দুর্গত এলাকায় পানিবন্দিদের উদ্ধার কাজের পাশাপাশি চলছে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। এসব এলাকায় ইতিমধ্যে ৬৩ মেক্ট্রিক টন চাল, ৭ লাখ নগদ টাকা এবং দুই হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাছিনা আক্তার বানু বলেন, ধোবাউড়া উপজেলায় নিমজ্জিত ধান ১১ হাজার ৭০০ হেক্টর, সম্পূর্ণ নিমজ্জিত সাত হাজার ৫০০ হেক্টর, আংশিক নিমজ্জিত চার হাজার ২০০ হেক্টর ও সবজি ৬০ হেক্টর।
হালুয়াঘাটে নিমজ্জিত ধান সাত হাজার ৬০০ হেক্টর, সম্পূর্ণ নিমজ্জিত চার হাজার ১০০ হেক্টর, আংশিক নিমজ্জিত তিন হাজার ৫০০ হেক্টর এবং সবজি ৭৫ হেক্টর। ফুলপুরে নিমজ্জিত ধান তিন হাজার ৬৩০ হেক্টর, সম্পূর্ণ নিমজ্জিত এক হাজার ৪৮০ হেক্টর, আংশিক নিমজ্জিত দুই হাজার ১৫০ হেক্টর এবং সবজি ৬২ হেক্টর।
বন্যার পানিতে ধোবাউড়া উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়নের ডৌমঘাটা গ্রামের কবির সারোয়ার সুজনের তলিয়ে গেছে ৪০ একর মাছের খামার এবং দেড়শ একর জমির ধান।
কবির সারোয়ার সুজন বলেন, “৪০ বছর ধরে মাছ চাষ করে আসছি। জীবনে কখনো এমন পরিস্থিতির শিকার হইনি। চোখের সামনে ছয়টি পুকুরের ৪০ লাখ টাকার কার্প জাতীয় মাছ বানের পানিতে ভেসে গেছে। তিনদিন ধরে পানিতে তলিয়ে আছে দেড়শ একর জমির ধান। সবি শেষ হয়ে গেল, সরকার সহযোগিতা না করলে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।”