ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালাতে বাধ্য হন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। এরপর থেকে এখনও সেখানেই আছেন, বলছে বিভিন্ন সূত্র। যদিও কিছুদিন আগে তিনি আরব আমিরাতে গেছেন বলে উঠেছিল গুঞ্জন। তবে, ভারতের পক্ষ থেকে হাসিনা সম্পর্কিত কোনো আপডেট জানানো হয়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের এক বক্তব্যে আসে ভারত, শেখ হাসিনা ও ট্রাভেল ডকুমেন্ট প্রসঙ্গ। এরপর থেকে নানা মনে ঘোরাফেরা করছে নানা প্রশ্ন। কারণ, অনেক আগেই স্বাভাবিক নিয়মে ভারতে অবস্থানের বৈধ সময় পেরিয়েছে শেখ হাসিনার। তারপর থেকে তিনি সেদেশে কীভাবে অবস্থান করছেন—তার রহস্য খুঁজছেন অনেকেই।
ট্রাভেল ডকুমেন্ট কী?
জানা গেছে, মূলত তিব্বতি শরণার্থীদের জন্য ভারত ‘আইডেন্টিটি সার্টিফিকেট’ (আইসি) বা ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ দিয়ে থাকে। এই ডকুমেন্ট দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সফর করা সম্ভব হয়। ‘আইসি’ হলুদ রঙের বুকলেট আকারে প্রদান করা হয়।
ট্রাভেল ডকুমেন্ট পেলে যে সুবিধা পাবেন শেখ হাসিনার লাভ
শেখ হাসিনা যদি ট্রাভেল ডকুমেন্ট পান, তবে তিনি যেকোনো দেশের ভিসা সহজেই পেতে পারেন। এর প্রেক্ষিতে তিনি বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতে পারেন। তবে, যদি কোনো দেশ তাকে রেস্ট্রিকশন দিয়ে থাকে, তবে সেই দেশটিতে ভিসা পাবেন না তিনি।
আসলেই কি ট্রাভেল ডকুমেন্ট পেয়েছেন হাসিনা?
ভারত ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ দিয়েছে বলে সম্প্রতি বেশ আলোচনা সৃষ্টি হলেও দেশটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নিশ্চিত করা হয়নি। গত শনিবার বিকালে নরসিংদীতে দুর্গাপূজার নবমীতে বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে পৌর শহরের সেবাসংঘ মন্দিরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে বলেন, ট্রাভেল ডকুমেন্ট যে কোনো দেশ যে কাউকেই ইস্যু করতে পারে, সেটি আটকানোর ক্ষমতা অন্য কারও নেই। তবে, কোনো মামলায় যদি তাকে আদালত হাজির করতে বললে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিকে শেখ হাসিনা ভারত ছেড়ে আরব আমিরাতের আজমান শহরে আশ্রয় নেওয়া নিয়ে যে তথ্য চাউর হয়, তাও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নিশ্চিত হতে পারেননি বলে গত ৮ অক্টোবর জানিয়েছিলেন। দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে ট্রাভেল পাস নিয়ে অনেকে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টায় আছেন, এমন খবরও প্রকাশ পেয়েছে। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান কী, সেদিন প্রশ্ন করা হয় পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে। উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মিশন ট্রাভেল পাস ইস্যু করতে পারে শুধুমাত্র দেশে ফেরার জন্য, অন্য কোনো দেশে যাওয়ার জন্য না।’
কেউ যদি বাংলাদেশে ফেরার জন্য ট্রাভেল পাস চায়, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরে তৌহিদ হোসেন বলেন, ট্রাভেল পাসের জন্য পাসপোর্ট লাগে। পলাতকদের জন্য ‘স্বাভাবিকভাবে’ পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে না। তারা যদি দেশে ফিরতে চায়, তাদেরকে অবশ্যই ট্রাভেল পাস ইস্যু করা যেতে পারে থিওরিটিক্যালি, যাতে তারা দেশে ফিরে আসতে পারে, ফর ওয়ান ওয়ে, ট্রাভেল টু বাংলাদেশ।
কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিলের পরও কীভাবে ভারতে শেখ হাসিনা?
৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় এখন কীভাবে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। গণমাধ্যম বলছে—ব্রিটেনে বসবাসরত আওয়ামী লীগ নেতা জানিয়েছেন, ভারতের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ দেওয়া হয়েছে, যা দিয়ে বিশ্বের যেকোনো দেশে ভিসা নিয়ে যাত্রা করা সম্ভব। আপাতত শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা ভারতে আছেন এবং সেখানে তাদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে, ভারতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো পরিষ্কার ঘোষণা আসেনি।
ভারতের সাবেক হাইকমিশনার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যদি ভারত সত্যিই শেখ হাসিনাকে ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ দেয়, তাহলে এটি একেবারেই অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়। এমন পরিস্থিতিতে এটি খুবই সাধারণ পদক্ষেপ।