বাংলা ব্যান্ড সংগীতের জাদুকর আইয়ুব বাচ্চুর ষষ্ঠতম মৃত্যুবার্ষিকী। তাকে বলা হতো গিটারের জাদুকর। ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর লাখো ভক্ত, পরিবার পরিজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান আইয়ুব বাচ্চু। ছয় বছর বা অর্ধযুগ হয়ে গেল তার মৃত্যুর।
২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর। এদিন ঘুম ভাঙতেই এক দুঃসংবাদ কানে আসে দেশবাসীর। আইয়ুব বাচ্চু আর নেই! সত্যি? যেন কেউ বিশ্বাসই করছেন না। রাস্তায় বের হতেই মানুষের মুখে মুখে একই খবর। তাহলে কি সত্যিই রুপালি গিটার ফেলে দূরে, বহুদূরেই চলে গেলেন গিটারের জাদুকর!
মুহূর্তের মধ্যেই শোকে ভারী হয়ে ওঠে সারাদেশ। সামাজিক মাধ্যমে একের পর এক নেটিজেনদের শোক; ভেসে ওঠে প্রিয় শিল্পীকে হারানোর বেদনা। সমাজ মাধ্যমের পাতাও ভরে ওঠে আইয়ুব বাচ্চুর সাদাকালো ছবিতে। বেলা বাড়তেই হাসপাতালে লোকারণ্য। চট্টগ্রামের শেষযাত্রার আয়োজনে জনসমুদ্র। ব্যান্ড সংগীতের জগতে এত বিষণ্নতা হয়তো এর আগে কেউ দেখেনি।
চট্টগ্রামের এই কৃতী সন্তান আইয়ুব বাচ্চু ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। গানকে ভালোবেসে সংগীতজীবন শুরু করেন ১৯৭৭ সালে। তার এক বছর পরেই ব্যান্ড জগতে পা রাখেন তিনি।
১৯৮০ সালে আইয়ুব বাচ্চু যোগ দেন সোলস ব্যান্ডে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি দলটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯১ সালে তিনি ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড (এলআরবি) ব্যান্ডদল গঠন করেন। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এই দলটির সঙ্গেই মেইন ভোকাল হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
অসংখ্য দর্শকপ্রিয় গানের মধ্যে তার কয়েকটি গান হলো ফেরারি মন, হাসতে দেখো, কষ্ট পেতে ভালোবাসি, চলো বদলে যাই, সুখেরই পৃথিবী ইত্যাদি।
সোলস-এ থাকাকালীন প্রকাশ হয় বাচ্চুর প্রথম একক অ্যালবাম ‘রক্তগোলাপ’। তবে তার সফলতার শুরু দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘ময়না’র মাধ্যমে। ৪০ বছরের গায়কী জীবনে ১২টি ব্যান্ড, ১৬টি একক ও বহু মিশ্র অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে আইয়ুব বাচ্চুর। গান গেয়েছেন বেশ কিছু চলচ্চিত্রেও।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আইয়ুব বাচ্চু অসংখ্য দর্শকপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। সে তালিকায় ‘সুখ’, ‘একদিন ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘ফেরারি মন’, ‘এই রুপালি গিটার’, ‘হাসতে দেখো’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘চলো বদলে যাই’সহ আছে বহু নাম।
আইয়ুব বাচ্চু এমন একটি নাম, যেই নামটি অনেক বেশি ইউনিক। তার বাবাও চাইতেন ছেলের এমন একটা নাম হবে, যা অন্য কারও নেই। যেমন আইয়ুব আলী, আইয়ুব হোসেন—এমন তো হয়-ই। দুটি নাম থেকে আলাদা অংশ নিয়ে রাখা হলো, আইয়ুব বাচ্চু। সেই থেকে তিনি হলেন ‘ওয়ান অ্যান্ড অনলি’ আইয়ুব বাচ্চু।
নব্বই দশক থেকে আইয়ুব বাচ্চু জনপ্রিয়তা্র তুঙ্গে অবস্থান করে। কিন্তু এরপরও তেমন স্টারডর্ম কাজ করত না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থেকেছেন এই কিংবদন্তী। বলা বাহুল্য, তারকা হিসেবে নয়, একজন ‘ভালো মানুষ’ হয়ে, সবার হৃদয়ে থেকে বাঁচতে চেয়েছিলেন এই গিটারের জাদুকর।