চীনে নিম্ন জন্মহার ও তার জেরে শিশুদের সংখ্যা কমতে থাকায় একের পর এক কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জন্মহার কমে যাওয়ার প্রবণতায় বিপর্যস্ত চীন। দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া সর্বশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে এ তথ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ২০২২ সালে চীনজুড়ে যেখানে ২ লাখ ৮৯ হাজার ২০০টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ছিল, পরের বছর ২০২৩ সালে তা হ্রাস পেয়ে নেমে এসেছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৪০০টিতে। অর্থাৎ মাত্র এক বছরে দেশটিতে ১৪ হাজার ৮০০টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বুলেটিনে আরও বলা হয়েছে— শতকরা হিসেবে এক বছরে চীনে ১ দশমিক ২ শতাংশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। আর এই সময়সীমায় চীনে কিন্ডারগার্টেনগামী শিশু শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ।
গত কয়েক বছর ধরেই চীনে জন্মহার হ্রাস পাচ্ছে। তবে সময় যত গড়াচ্ছে, সংকট দূর হওয়ার পরিবর্তে আরও বেশি ঘনীভূত হচ্ছে। ২০২৩ সালে চীনে জন্ম নিয়েছে মাত্র ৯০ লাখ শিশু। ১৯৪৯ সালের পর এই প্রথম এক বছরে এত কম সংখ্যক শিশুর জন্ম দেখেছে দেশটি। দেশটির জনসংখ্যা গবেষকদের মতে, এই মুহূর্তে চীনের জন্মহার হওয়া উচিত ২ দশমিক ১; কিন্তু গত বছর জন্মহার ছিল ১-এর চেয়েও কম। এদিকে জন্মহার কমে যাওয়ায় একদিকে যেমন শিশুদের সংখ্যা কমছে, তেমনি অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বয়স্কদের সংখ্যা। যেসব কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে, সেসবের মধ্যে অনেকগুলোকে ইতোমধ্যে বৃদ্ধ নিবাসে রূপান্তর করা হয়েছে।
চীনের জনসংখ্যাবিদ হে ইয়াফু দেশটির দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে এ প্রসঙ্গে বলেন, “শিশুদের সংখ্যা কমতে থাকলে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমবে— এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু তাই বলে একের পর এক স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া কোনো ইতিবাচক ব্যাপার নয়। আমার মতে, শিশুদের কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তির বয়সসীমা কমিয়ে ৩ বছর করে দেওয়া উচিত।
চীনে জন্মহার কমে যাওয়ার একটি বড় কারণ প্রাপ্তবয়স্ক তরুণ-তরুণীদের বিয়ে না করা এবং এবং একা থাকার প্রবণতা বাড়তে থাকা। আবার তরুণ-তরুণীদের একা থাকার প্রবণতা বাড়তে থাকার প্রধান কারণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে ধীরগতি এবং বাড়তে থাকা বেকারত্ব।
দেশটির পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪ সালের প্রথম ৬ মাসে চীনে বিয়ে করেছেন ৩০ লাখ ৪৩ হাজার যুগল। আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসের থেকে এই সংখ্যা ৪ লাখ ৯৮ হাজার কম। এক সময় চীন ছিল বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। এমনকি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে দেশটিতে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির সরকার এক সন্তান নীতিও গ্রহণ করেছিল।
কিন্তু কঠোরভাবে এই নীতি মেন চলতে থাকায় ২০১০ সাল থেকে দেশটির জন্মাহার হ্রাস পেতে শুরু করে। এই সংকট কাটাতে ২০১৬ সালে এক সন্তান নীতি বাতিল করে চীনের সরকার। এক সন্তাননীতি বাতিলের পাশপাশি ২০২০ সালের মধ্যে চীনের জনসংখ্যা ১৪০ কোটিতে উন্নীত করার লক্ষমাত্রাও নিয়েছিল চীনের সরকার। কিন্তু তা সফল হয়নি।