মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করবে যে সাত অঙ্গরাজ্য
মোহনা অনলাইন
এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনটি হতে যাচ্ছে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। কমলা হ্যারিস ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁরা দুজনই আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী। শেষ সময়ে এসে এখন প্রার্থীরা সব উদ্যম ঢেলে দিয়েছেন ‘সুইং স্টেট’গুলোতে।
মার্কিন সংবিধানের অধীন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নিজস্ব ভোট রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জটিল ইলেকটোরাল কলেজ ব্যবস্থার অধীন প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্দিষ্টসংখ্যক ইলেকটর (নির্বাচক) থাকেন। ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৪৮টির জন্য নিয়ম হলো—যিনি পপুলার ভোটে (সাধারণ নাগরিকদের ভোট) জিতবেন, তিনিই সে অঙ্গরাজ্যের সব কটি ইলেকটোরাল ভোট পাবেন; সেখানে পপুলার ভোটের ব্যবধান যত কমই হোক না কেন।
নির্বাচনে জিততে কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে অন্তত ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট পেতে হয়।
এখানে উল্লেখ্য, ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে সিংহভাগ অঙ্গরাজ্যের ফলাফল প্রতিবার একই থাকে। কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে ফলাফল ঘনঘন বদলায়। সেগুলোকে বলা হয় দোদুল্যমান রাজ্য (সুইং স্টেট)। এবারের নির্বাচনে যে সাত অঙ্গরাজ্য ব্যবধান গড়ে দিতে পারে, তার একটি তালিকা করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
এ বছর এরকম সাতটি ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট বা সুইং স্টেট প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করতে যাচ্ছে।
জর্জিয়া
১৬টি ইলেকটোরাল কলেজের রাজ্য জর্জিয়ায় ২০২০ সালে মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছিলেন বাইডেন। ১৯৯২ সালের পর বাইডেনই প্রথম ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে জয় পান এই আসনে। আবার এই রাজ্যের প্রায় ৩৩ শতাংশ ভোটারই কৃষ্ণাঙ্গ, যা কমলা হ্যারিসের জন্য ইতিবাচক হয়ে উঠতে পারে।
এ ছাড়া জর্জিয়া সেই রাজ্যগুলোর একটি যেখানে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল পালটে দেওয়ার কারসাজিতে জড়িত হিসেবে অভিযুক্ত করেছিলেন বিচারকরা। ওই মামলা অবশ্য স্থগিত রয়েছে এবং আগামী নির্বাচনের আগে এর বিচারকাজ আর শুরুও হবে না।
ফাইভথার্টিএইট ডটকমের সর্বশেষ জরিপে অবশ্য এই রাজ্যেও এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। তথ্য বলছে, জর্জিয়ায় ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ সমর্থন নিয়ে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। কমলা হ্যারিসের পক্ষে সমর্থন ৪৭ শতাংশ। সে হিসাবে ১ দশমিক ৭ শতাংশ সমর্থনে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প।
অ্যারিজোনা (১১ ইলেকটোরাল ভোট)
এই অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে সবচেয়ে তুমুল লড়াই হয়েছিল ২০২০ সালের নির্বাচনে যেখানে বাইডেন মাত্র ১০ হাজার ৪৫৭ ভোটে জয় পেয়েছিলেন। এবার ট্রাম্পের আশা মেক্সিকো সীমান্তের এই অঙ্গরাজ্যে বাইডেন-কমলা প্রশাসনের অভিবাসন নীতিতে মানুষের মনে যে হতাশা তৈরি হয়েছে সেখান থেকে ভোটের দিক দিয়ে সমর্থন বাড়বে তার। কমলা গত সেপ্টেম্বরে অ্যারিজোনা সীমান্ত সফর করেন এবং অভিবাসন ঠেকানো এবং দ্বিপক্ষীয় সীমান্ত বিল পুনরুজ্জীবিত করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
মিশিগান (১৫ ইলেকটোরাল ভোট)
পূর্বে ডেমোক্রেটদের ঘাঁটি হলেও ২০১৬ নির্বাচনে এই অঙ্গরাজ্যে জিতেই হিলারিকে হারিয়েছিলেন ট্রাম্প। ২০২০ নির্বাচনে আবার বাইডেন জেতেন এখানে। জনসংখ্যার অনুপাতে এই রাজ্যে সবচেয়ে বেশি আরব-আমেরিকান বাস করেন। গাজায় ইসরাইলের গণহত্যার জেরে আরব জনসংখ্যার মাঝে বাইডেন-কমলা প্রশাসনের জনপ্রিয়তা এখন একদম তলানিতে। আরবদের ভোটই এই অঙ্গরাজ্যে ব্যবধান গড়ে দিতে পারে।
নর্থ ক্যারোলাইনা
১৬টি ইলেকটোরাল কলেজের রাজ্য নর্থ ক্যারোলাইনাতে ২০২০ সালের নির্বাচনে জিতেছিলেন ট্রাম্পই। জুলাইয়ে বাইডেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দৌড়ে থাকার সময় পর্যন্ত ট্রাম্প বড় ব্যবধান ধরে রেখেছিলেন। কমলা হ্যারিসের প্রার্থিতা নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে তিনি সমর্থনের দিক থেকে এগিয়ে যেতে থাকেন, ট্রাম্পের খুব কাছে চলে যান তিনি। ১৯৯০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী নর্থ ক্যারোলাইনাতে শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী ছিল ৭৫ শতাংশ। বর্তমানে তাদের সংখ্যা নেমে এসেছে ৬০ শতাংশে। অন্যদিকে এই তিন দশকে রাজ্যটির জনসংখ্যাও বেড়েছে ব্যাপক পরিমাণে। ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের উপস্থিতিতে এই রাজ্যটি যথেষ্ট বৈচিত্র্যময়।
ফাইভথার্টিএইট ডটকমের সর্বশেষ জরিপে ২০ অক্টোবরের তথ্য বলছে, ৪৮ শতাংশ ভোটার সমর্থন নিয়ে এ রাজ্যে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। তবে কমলা হ্যারিসও খুব পিছিয়ে নেই। তার পক্ষে সমর্থন রয়েছে ৪৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ভোটারের।
পেনসিলভেনিয়া (১৯ ইলেকটোরাল ভোট)
গত দুই নির্বাচনে যে প্রার্থী এই অঙ্গরাজ্যে জয় পেয়েছেন, সে-ই হোয়াইট হাউজে জায়গা করে নিয়েছেন। এখানে এক শতাংশেরও কম ভোটের ব্যবধানে ২০১৬ নির্বাচনে জয় পান ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২০ নির্বাচনে জো বাইডেন জয় পান মাত্র এক দশমিক দুই শতাংশ ভোটের ব্যবধানে। এবারও এই রাজ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গত জুলাইয়ে এখানে প্রচারণা চালানোর সময়ই আততায়ীর আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গ্রামাঞ্চলের শ্বেতাঙ্গ ভোটের জন্য লড়ছেন তিনি এবং সতর্ক করছেন ছোট শহরগুলো অভিবাসীদের দখলে চলে যাচ্ছে।
এদিকে কমলা হ্যারিস এই অঙ্গরাজ্যের অন্যতম বড় শহর পিটসবার্গের অবকাঠামো উন্নয়নে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের রূপরেখা দিয়েছেন। দুই প্রার্থীই এই রাজ্যে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উইসকনসিন (১০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট)
২০১৬ সালের নির্বাচনে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকার পরেও হিলারি ক্লিনটন এই অঙ্গরাজ্যে হেরে গিয়েছিলেন। এখানেই গ্রীষ্মকালীন জাতীয় কনভেনশন করেছিলেন ট্রাম্প এবং তিনি মনে করেন, এখান থেকে জয়ী হওয়া সম্ভব। প্রাথমিকভাবে এখানকার মতামত জরিপে ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও কমলা হ্যারিসের মনোনয়নের পর প্রতিযোগিতা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে অঙ্গরাজ্যটিতে।
নেভাদা (৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট)
প্রায় ৩১ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই রাজ্যটিতে ২০০৪ সালের পর থেকে রিপাবলিকানরা জয়ী হতে পারেনি। তবে এবার ট্রাম্প রক্ষণশীল ও হিস্পানিক ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ডেমোক্র্যাট পার্টির মনোনয়নের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই কমলা হ্যারিস তার অর্থনৈতিক পরিকল্পনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন নেভাদার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। এখানেই যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম অতিথি সেবা শিল্প নগরী লাস ভেগাস অবস্থিত।