যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তের ঘোষণা আসায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাংলাদেশিসহ অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশী। যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী শিশু, যার পিতা-মাতার কেউই মার্কিন নাগরিক বা দেশের স্থায়ী বাসিন্দা নয়, তাকে স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য বিবেচনা করা হবে না, যদি দেশটির নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন।
বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন নির্বাচনে জয়ী রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের এই বিধানটি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। তার প্রচারাভিযানের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া শিশুদের স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্বের বিধান বাতিল হবে। পরিবর্তে শুধুমাত্র যাদের পিতা বা মাতার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব বা বৈধ বসবাসের অনুমতি রয়েছে, তাদেরই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এই নির্দেশনা কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইনজীবীরা ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তকে মার্কিন সংবিধানবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন। অভিবাসন আইনজীবী গ্রেগ সিসকাইন্ড বলেন, এটি মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর লঙ্ঘন, তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে।
নির্বাহী আদেশের পর এটি আইন হিসেবে পাস হলে, তা ভারতীয় প্রবাসীদের জন্য এক বিশাল ধাক্কা হয়ে দেখা দেবে। গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চের বিশ্লেষণ অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৮ লাখ ভারতীয় আমেরিকান আছে। যাদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ বা ১৬ লাখ যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছে। নতুন আইন হলে, এই অভিবাসীদের অনেকেই আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে আর স্থায়ী বাসিন্দা বা নাগরিক হতে পারবেন না।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে,২০২৩ সালের মার্চে নাগাদ আমেরিকার অভিবাসন প্রক্রিয়ার কর্মসংস্থানভিত্তিক ‘গ্রিন কার্ডের’ অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা ভারতীয় সংখ্যা এক মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক কেটো ইনস্টিটিউটের অভিবাসন বিষয়ক পরিচালক ডেভিড বিয়ার এই তথ্য দিয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে, মৃত্যু ও বয়স উত্তীর্ণ হওয়ার কারণে কিছু ভারতীয় এ তালিকা থেকে বাদ পড়বেন। নতুন আইন পাস হলে, এসব কারণ বিবেচনায় নিলে বলা যায়—এসব ভারতীয়দের গ্রিন কার্ডের জন্য অপেক্ষার সময় হবে ৫৪ বছর। আর যদি এসব কারণ বিবেচনা না করা হয়, তবে অপেক্ষা হতে পারে ১৩৪ বছর। এই দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষায় ৪ লাখ ১৪ হাজার ভারতীয় মারা যাবেন এবং ১ লাখের বেশি ভারতীয় শিশু ২১ বছর পূর্ণ হওয়ার পর নির্ভরশীল ভিসা বা ‘ডিপেনডেন্ট ভিসার’ বৈধতা হারাবে এবং গ্রিন কার্ডের তালিকা থেকে বাদ পড়বে।