আজ ৬ ডিসেম্বর ফেনী মুক্ত দিবস। ৫৩ বছর আগে ফেনীতে সেদিন সকালটা এসেছিল অন্যরকমভাবে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে রক্তাক্ত এ জনপদে সেদিন এসেছিল প্রতিক্ষিত ‘মুক্তি’। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে জনপদে উদিত হয়েছিল স্বাধীনতার প্রথম সূর্য।
১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার ও আলবদরদের হটিয়ে ফেনীকে হানাদারমুক্ত করে স্বাধীন করা হয়। ওইদিন সকাল থেকে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারা ২নং সাব সেক্টর কমান্ডার ও ১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা অধিনায়ক লে. কর্নেল জাফর ইমাম, বীর বিক্রমের (তৎকালীন ক্যাপ্টেন) নেতৃত্বে দলে দলে লাল-সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে ফেনী শহরে প্রবেশ করে।
মুক্ত ফেনীতে সেদিন মানুষের দৃষ্টি ছিল ফেনী কলেজে। বিজয়ের এক দিন আগে পাকিস্তানি আর্মি কলেজ ক্যাম্পাস ছেড়ে দেয়। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ ক্যাম্প ও বহু শহীদের রক্তে রঞ্জিত বধ্যভূমি। এ প্রসঙ্গে ফেনী কলেজের তৎকালীন দর্শন বিভাগের শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবর রহমান বলেন, সেদিন মাঠের একদম দক্ষিণের গোলপোস্টের নিচে অনেক মরদেহ পেয়েছি। এক কোণে ২০-২৫টি মরদেহ দেখেছি। মরদেহ মানে হাড়গোড়ই ছিল শুধু। ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে সাংবাদিকরা গিয়ে ছবি তুলে এনেছেন। কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তার সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে এখানে অসংখ্য মানুষকে ধরে এনে হত্যা করেছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। গোলপোস্টের পেছনের অংশ ছাড়াও মাঠ লাগোয়া রেলওয়ের ডোবাতেও মরদেহ পচে-গলে ছিল। এখন যেখানে কলেজ অডিটোরিয়াম রয়েছে সেখানেও মানুষের কঙ্কাল পাওয়া গেছে।
মুক্তিযুদ্ধে ফেনীর অনেকগুলো রণাঙ্গনের মধ্যে মুন্সীর হাটের মুক্তারবাড়ী ও বন্ধুয়ার প্রতিরোধের যুদ্ধ ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ রণাঙ্গনে সম্মুখ সমরের যুদ্ধকৌশল বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানি মিলিটারি একাডেমিগুলোতে পাঠ্যসূচির অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যা এ রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের অহংকার ও গর্বের বিষয়।
দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসন আয়োজন করেছে নানা আয়োজন। শহরের জেল রোডস্থ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হবে। এছাড়া বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ফেনী জেলা শহরে আলোচনা সভা ও বিজয় র্যালি বের করবে। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি উদযাপনের জন্য নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।