ওয়াজ মাহফিলে ভারতীয় অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানার সৌন্দর্যের বর্ণনা দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ইসলামি বক্তা মুফতি আমির হামজা। এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) তিনি তার ফেসবুক পেজে একটি পোস্টের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
ইসলামি বক্তা আমির হামজার ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘আসসালামু আলাইকুম প্রিয় তৌহীদি জনতা। আপনাদেরকে বারবার আশাহত করার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আপনাদেরকে কিছু কথা বলা জরুরি মনে করছি। যাতে আপনারা আমার বিষয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে ইনসাফ করতে পারেন। ঢালাওভাবে যেসব কথাবার্তা চারদিকে বলা হচ্ছে, তার সবটুকুই কি সঠিক? নাকি ভিন্ন বাস্তবতা আছে? সম্প্রতি সিরিয়ার কারাগার থেকে মুক্ত বন্দিদের চিত্র আপনাদের সামনে। তারা অনেকেই নিজের নাম পর্যন্ত ভুলে গেছে। ফ্যাসিস্টের কারাগারে থাকাকালীন এমন কোনও নির্যাতন নাই যা আমার ওপরে করা হয়নি। আমার ব্রেনে পর্যন্ত কারেন্ট শক দেওয়া হয়েছে ও স্লো পয়েজনিং করা হয়েছে। বাকি নির্যাতনের কথা আর না বলি। আমি স্বীকার করছি মানসিকভাবে আমি পুরোপুরি সুস্থ না। শারীরিক ও মানসিক কোনোদিক দিয়েই আমি ফিট না। নিজের অজান্তেই অসংলগ্ন কথাবার্তা মুখে চলে আসছে।
তিনি আরও লেখেন, আমার আচরণও আমার নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। এসব চিন্তা আমাকে আরও অসুস্থ করে তুলেছে। আর আমার দেওয়া বক্তব্য নিয়ে চলমান যে বিতর্ক-সেই আলোচনাটাতে শুধুমাত্র উক্ত নায়িকার আলাপটুকুই আমার ভুল হয়েছে, আমি স্বীকার করছি। তবে যদি আলোচনাটি পুরোপুরি শোনেন, তাহলে দেখবেন আলোচনাটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভবিষ্যতে আমি আরও সতর্ক থাকার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
এখন আপনারা বলতে পারেন আমি যেহেতু মানসিক ও শারীরিকভাবে ফিট না তাহলে এতো মাহফিল কেন করছি? সেক্ষেত্রে আপনাকে বলবো, আপনি কিছুক্ষণ আমার জায়গায় দাঁড়ান ভাই প্লিজ! তারপর ভাবুন। খোলামেলা আপনাদেরকে বলছি, জামায়াতের কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা, শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ যখন একটা মাহফিলের জন্য রিকোয়েস্ট করে তখন আমার কী করার থাকতে পারে বলুন? শুধুমাত্র ভিআইপিদের রিকোয়েস্ট রাখতে গেলেই, সাধারণ জনতা তো বহুদূর। জেলা দায়িত্বশীল ও আত্মীয় স্বজনদের রিকোয়েস্ট রাখাও সম্ভব হয় না। অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট পরবর্তী সময়ের অবাধ স্বাধীনতা তাফসির মাহফিল আয়োজনকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। তার একটি প্রেশার, অন্যদিকে শায়েখ মিজানুর রহমান আজহারী ভাই দেশে না থাকায় আরেকটি চাপ সাথে যুক্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে যথাযথ শারীরিক, মানসিক ও একাডেমিক প্রস্তুতি গ্রহণ করার সুযোগ পাইনি। যার ফলেই মাঝে মধ্যে এমন ত্রুটি, ভুল আমার দ্বারা হয়ে যাচ্ছে। আমি আবারো বলছি, আমি সুস্থ না। অন্যদিকে বাস্তবতার শিকার। যেখানে সুস্থ মানুষের পক্ষেই এতো প্রোগ্রাম, জার্নি করা অসম্ভব হয়ে যায় সেখানে আমার মতো অসুস্থ ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা কী একটু ভেবে দেখবেন। আমি আপনাদের কাছে আবারও ক্ষমা চাই এবং এই সিজনে আমার ভুলভ্রান্তিগুলো দিয়ে প্রকৃত আমাকে জাজ (বিচার) কইরেন না দয়া করে। আমি কথা দিচ্ছি, পরবর্তী বছরগুলোতে পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ও আমার যথাযথ ট্রিটমেন্ট নিয়ে তাফসির মাহফিলে অংশগ্রহণ করবো ইনশাআল্লাহ। সাথে গণহারে দাওয়াত নেওয়া বন্ধ করে দেবো। বিশেষ দোয়াপ্রার্থী আমির হামজা।’
অনেকে তার ক্ষমা চাওয়ার পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও সমালোচকরা বলছেন, একজন ইসলামি বক্তার উচিত তার কথার মাধ্যমে মানুষকে সঠিক বার্তা দেওয়া, বিশেষত যখন তিনি হাজারো মানুষের কাছে বক্তব্য রাখেন।
আমির হামজা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আগামী বছর থেকে তিনি প্রোগ্রামের সংখ্যা সীমিত করবেন এবং যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। এই ঘটনায় তার বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক হলেও অনেকেই আশা করছেন, তিনি তার বক্তব্যে আরও সতর্ক হবেন।