বিনোদন

শেষবার এফডিসিতে অঞ্জনা, দাফন বনানী কবরস্থানে

শেষ বারের মতো কর্মক্ষেত্র এফডিসিতে ভালোবাসায় সিক্ত হলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান। শনিবার দুপুর পৌনে একটার দিকে চিত্রনায়িকা যখন চিরচেনা জায়গায় প্রবেশ করলেন তখন অপেক্ষায় ছিলেন সহকর্মীরা।

এফডিসিতে উপস্থিত ছিলেন চিত্রনায়ক আলমগীর, উজ্জ্বল, ইলিয়াস কাঞ্চন, শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরসহ অনেক অভিনেতা অভিনেত্রী ও এফডিসির কর্মকর্তা কর্মচারিরা।

অঞ্জনার মরদেহ সামনে রেখে এসময় তার উদ্দেশ্যে শোক প্রকাশ করেন উপস্থিত সহকর্মী অভিনেতা অভিনেত্রীরা। পরে সেখানেই হয় প্রথম নামাজে জানাজা। গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হন অঞ্জনা। এরপর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে তার মরদেহ এফডিসি থেকে রওনা হয় চ্যানেল আইয়ের উদ্দেশে।

জানা যায়, চ্যানেল আই চত্বরে হবে নায়িকা অঞ্জনার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা। সেখান থেকে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে বনানী কবরস্থানে। সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন তিন শতাধিক সিনেমার এই গুণী অভিনেত্রী।

টবেলা থেকে নৃত্যের প্রতি আগ্রহের কারণে বাবা মা তাকে নৃত্য শিখতে ভারতে পাঠান। সেখানে ওস্তাদ বাবুরাজ হীরালালের অধীনে নাচের তালিম নেন এবং কত্থক নৃত্য শিখেন অঞ্জনা রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মাত্র চার বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে অঞ্জনার আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর আর থেকে থাকেননি। নৃত্যশিল্পী হিসেবে ছোট থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছেন। সাদাকালো থেকে রঙ্গিন বাংলা চলচ্চিত্রের সাক্ষী গুণী এই অভিনেত্রী। দেশ-বিদেশ মিলিয়ে প্রায় তিন শতাধিক সিনেমাতে কাজ করেছেন একজন অঞ্জনা।

সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে অঞ্জনা রহমান তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। শুধু বাংলাদেশই নয়, ৯টি দেশের ১৩টি ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, তুরস্ক, থাইল্যান্ড ও শ্রীলংকা। অঞ্জনা দাবি করেছিলেন, তিনিই দেশের একমাত্র চিত্রনায়িকা যিনি ৯টি দেশের এতোগুলো ভাষায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

ক্যারিয়ারে নিজের সময়কালের শীর্ষ জনপ্রিয় সব অভিনেতার সঙ্গেই অভিনয় করেছেন অঞ্জনা। তাদের মধ্যে আছেন- রাজ্জাক, আলমগীর, জসিম, বুলবুল আহমেদ, জাফর ইকবাল, ওয়াসিম, উজ্জ্বল, ফারুক, ইলিয়াস জাভেদ , ইলিয়াস কাঞ্চন, সোহেল চৌধুরী, রুবেল, সুব্রত বড়ুয়া, মান্না প্রমুখ। এছাড়া মিঠুন চক্রবর্তী (ভারত), ফয়সাল (পাকিস্তান), নাদীম (পাকিস্তান) জাভেদ শেখ (পাকিস্তান), ইসমাইল শাহ (পাকিস্তান), শীবশ্রেষ্ঠ (নেপাল) ও  ভূবন কেসি (নেপাল) অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন অঞ্জনা।

১৯৮১ সালে ‘গাংচিল’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন অঞ্জনা। এরপর ১৯৮৬ সালে ‘পরিণীতা’ সিনেমায় ললিতা চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করে একই পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি ‘পরিণীতা’, ‘মোহনা’ ও ‘রাম রহিম জন’ সিনেমার জন্য তিনবার বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন।

অভিনয়ের পাশাপাশি অঞ্জনা চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও করেছেন। তার প্রযোজিত চলচ্চিত্রগুলো হলো- ‘নেপালী মেয়ে’, ‘হিম্মতওয়ালী’, ‘দেশ বিদেশ’, ‘বাপের বেটস’, ‘রঙিন প্রাণ সজনী’, ‘শ্বশুরবাড়ি’, ‘লাল সর্দার’, ‘রাজা রানী বাদশা’, ‘ডান্ডা মেরে ঠান্ডা’, ‘বন্ধু যখন শত্রু’।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button