Top Newsঅর্থনীতি

ট্রাম্প : যুদ্ধ নয় বাণিজ্য

শাহীন রাজা : আর দু্ই দিন পরই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের প্রায় সকল দেশের সরকার প্রধান এবং রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছেন। কেননা আমেরিকা হচ্ছে পরাশক্তি। বিশ্বরাজনীতিতে দীর্ঘ সময় ধরে আধিপত্য বজায় রেখে আসছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের হবে এটা দ্বিতীয় মেয়াদ। তবে মাঝখানের চার বছর জো বাইডেন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতিক এবং কূটনীতিক বিশেষজ্ঞগণ মনে করছেন, এবার ট্রাম্প নতুন রূপে আবির্ভূত হবেন !

গত চার বছর বাইডেনের শাসনামল ছিল, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ এবং অস্ত্রের প্রসার ঘটিয়েছেন। বিশ্বে আমেরিকার আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যেই তিনি এ নীতি নিয়েছিলেন। ট্রাম্প-ও আমেরিকার আধিপত্য বিস্তারে কাজ করবেন। তবে তাঁর কর্মপদ্ধতি বা নীতিমালা হবে ভিন্ন !

ট্রাম্পের আমেরিকা হবে, বাণিজ্যের মাধ্যমে আধিপত্য সম্প্রসারণ করা। সরকারি আমলাদের পরিবর্তে করপোরেট বাণিজ্য গোষ্ঠী হবে প্রধান সহযোগী। যার অন্যতম দৃষ্টান্ত হচ্ছে, ইলন মাস্ক। আরো অনেককেই আমরা হয়তো আগামীতে দেখতে পাবো।

তবে বিভিন্ন সামরিক প্রতিষ্ঠান কিংবা পেন্টাগনকে সাথে রাখতে হবে। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য সুসংহত করতে হলে এদের সহযোগিতা অত্যাবশকীয়। আমেরিকার বাস্তবতা হচ্ছে পেন্টাগন-এর ধারাবাহিকতা। একে অস্বীকার করা ট্রাম্পের পক্ষে সম্ভব নয়।

প্রতিরক্ষা বিভাগের সাবেক বিশ্লেষক মাইকেল মালুফ রুশ সংবাদ সংস্থা স্পুটনিককে এক সাক্ষাতকারে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা পরিবর্তন চেয়েছে। আমেরিকার জনগণ ট্রাম্পকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার মধ্যে একটি বার্তা আছে। তা হচ্ছে, তাঁরা বাইডেন শাসনের পরিবর্তন চেয়েছিল।

এই বিশ্লেষক বলেন, মার্কিন জনগণ, ট্রাম্পের চার বছরের শাসনামল দেখেছে। বাইডেন আমলেরও চারবছর দেখলো। দুই আমল দেখার সুযোগ পায়। ট্রাম্পের অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য নিয়ে আমেরিকানদের মাঝে উদ্বেগ থাকলেও, রাষ্ট্র পরিচালনায় ট্রাম্পের নীতিগুলো ছিল তাঁদের পছন্দ। ট্রাম্পের গৃহীত নীতি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ অনেক বেশি উপকৃত হয় বলে তারা মনে করছে।

মাইকেল মালুফ স্পুটনিক-কে জানান, ব্যবসায়ী ইলন মাস্কের যুক্ততা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ব্যয় কমানোর পথ দেখাবে। তিনি উল্লেখ করেন, ইলন মাস্ক ইতিমধ্যে বছরে দুই ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় কমানোর সুযোগ করা যাবে বলে দেখিয়েছেন। যদিও এটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। কেননা বছরে আমেরিকার প্রায় ছয় ট্রিলিয়ন ডলার বাজেট ঘাটতি রয়েছে। এ অবস্থায় যদি দুই ট্রিলিয়ন ডলার খরচ বাঁচানো যায়, তা যুক্তরাষ্ট্রের বাজেটঘাটতি কমানোর ক্ষেত্রে বড় ধরনের সহযোগিতা করবে।

মালুফ আরও উল্লেখ করেন, তারা সেরা কিছু দেখাতে পারবে আশা করছে। তবে মার্কিন সরকারের আমলাতন্ত্রের কারণে বড় ধরনের বাধার মুখে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।

এদিকে বিবিসি এক সংবাদে জানিয়েছে, আমেরিকার বর্তমান অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে যেইসব দেশের সাথে বাণিজ্য রয়েছে তাদের উপর ট্যারিফ বাড়াবে। এর মধ্যে চীন, কানাডা এবং মেক্সিকো রয়েছে। এমনকি ভারতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জো বাইডেনের চারবছর ছিল যুদ্ধ এবং গণতন্ত্রের পুর্নবাসন। এই করতে যেয়ে একদিকে যেমন বাণিজ্য হারা হয়েছে। অন্যদিকে সামরিক ব্যয় বেড়েছে। সামরিক ব্যয় বাড়াতে গিয়ে আমেরিকার মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়।

এছাড়া, দুই হাজার বিশ সাল থেকে বাইশ সাল পর্যন্ত ভাইরাস করোনা বিশ্বকে সকল কর্মকান্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। এর পর পরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমেরিকাসহ গোটা বিশ্ব আরও একধাপ পিছিয়ে যায়।

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, ন্যাটো জোটের বিশাল অংকের ব্যয় বহন আমেরিকার পক্ষে আর সম্ভব নয়। ন্যাটো ভুক্ত রাষ্ট্রগুলোকেই এই সংস্থার ব্যয়ের বড় অংশ যোগান দিতে হবে। নিরাপত্তার অজুহাতে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো আমেরিকার কাছ থেকে বড় আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকে। ট্রাম্প মনে করেন, এটা এক ধরনের ব্ল্যাকমেইলিং। তাই তিনি এই খাতে খরচ করতে আগ্রহী নয়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ট্রাম্প ছায়া যুদ্ধে করেন। এই যুদ্ধ, ধ্বংস ছাড়া কোন ফলাফল নয়। তাই এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে আর কোন সামরিক বা আর্থিক বরাদ্দ নয়।

এদিকে প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আমেরিকার সামরিক বরাদ্দ ছিল ৬০ বিলিয়ন ডলার। এই ব্যয় মেটাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয়ে ঘাটতি দেখা দেয়। একারণে ট্রাম্প মনে করছে, এই যুদ্ধে আর ব্যয় বহন নয়।

এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলেও ট্রাম্পের আগের আমলের নীতির পরিবর্তন আসবে। ট্রাম্প ভারতের জন্য চীনের সাথে সম্পর্ক বিনষ্ট করবে না। ট্রাম্প মনে করেন, চীনকে দেয়ার কিছু নেয়। বরঞ্চ আর্থিক সুবিধা লাভের সম্ভাবনা বেশী। তাই চীনের সাথে সম্পর্কের নতুন মাত্রা সৃষ্টি হবে। কেননা সুসম্পর্ক থাকলে সামরিক ব্যয় অনেক কমে আসবে।

আর ভারত সম্পর্কে তাঁর ধারণা, ভারতকে অনেক সহোযোগিতা করা হয়েছে। বিশেষ করে সামরিক সহযোগিতা। কিন্তু ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একক বন্ধু নয়। রাশিয়ার সাথে সমানতালে সম্পর্ক চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধে ভারতের অবস্থান নিয়ে তারা সন্দিহান। এমনকি মিয়ানমার ইস্যুতেও ভারতের অবস্থান স্পষ্ট নয়।

এইসব কারণে ট্রাম্প ভারতের সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলবেন। কিন্তু বাড়তি কোন সহযোগিতা পাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন না। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে ট্রাম্পের নীতিমালা হচ্ছে, আর যুদ্ধ নয়। এবার দু-পক্ষকে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। এবং যে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে তাতে মনে করা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আসতে যাচ্ছে।

অবশেষে বলা যায়, ট্রাম্প নতুন নীতি নিয়ে আসছে, যুদ্ধ নয় বাণিজ্য।

লেখক: শাহীন রাজা, হেড অব এডিটোরিয়াল, মোহনা টেলিভিশন।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button