Top Newsজাতীয়রাজনীতি

নির্বাচন এবং সংস্কার সঙ্কটে বাংলাদেশ

শাহীন রাজা : নির্বাচন না সংস্কার এই সঙ্কটে পড়ে গেছে, বাংলাদেশ! সঙ্কটের আবর্তে পড়ে, দেশ আবার-ও অনিশ্চয়তার পথে। দীর্ঘ দেড় দশকের স্বৈর শাসনের অবসানের পর নতুন দিনের সূর্য উদিত হয়। পাঁচ মাস যেতে না যেতেই ঘন কুয়াশায় ধূসর, বিষন্ন এক বাংলাদেশ। নির্বাচন এবং সংস্কারের দ্বন্দ্বে পড়ে দেশ আজ আবার-ও পেছনের পথে হাঁটছে !

স্বৈরশাসন অবসানের পর যাঁরা সংস্কারের দায়িত্বে আছেন তাঁদের অভিযোগ, দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলে সংস্কার রুদ্ধ করবার চেষ্টা। আর রাজনৈতিক দলের কথা হচ্ছে, সংস্কারের নামে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার অপচেষ্টা। এই দ্বন্দ্বে সম্ভাবনার বাংলাদেশ মাঝপথে থেমে যাচ্ছে। আবারও অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ!

সংস্কারে থাকা লোকেরা সংস্কার টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে নতুন এক রাজনৈতিক দল গঠন করতে হবে। এবং তাঁরা এব্যাপারে ইতিমধ্যে ঘোষণাও দিয়েছে। যার প্রেক্ষিতে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তারা মনে করছে, সংস্কারের নামে ক্ষমতাকে ব্যবহার করে নির্বাচন করতে চাইছে। তারা মনে করছে সংস্কার নয়, ক্ষমতায় যাওয়াই লক্ষ্য বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের।

সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘সরকার নিরপেক্ষ না থাকতে না পারলে নির্বাচনের পূর্বে নিরপেক্ষ সরকারের হবে। জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া নেতৃবৃন্দ নতুন দল গঠনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে যেতে চাইছে বলে জানা যাচ্ছে। সরকারে নিজেদের প্রতিনিধি রেখে নির্বাচনে যেতে চাইলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেবে না। বিবিসি’কে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, দ্রুত নির্বাচন না দেয়া হলে দেশে অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।’

এই কথা প্রচার হওয়ার সাথে সাথে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং বর্তমান সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান। নিজ ভেরিফাইড প্রোফাইলে স্ট্যাটাস দেন, ‘ মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্য, আরেকটি এক/এগারো সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে ‘। এরপর আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুলাহ গণসমাবেশে মির্জা ফখরুলের কড়া সমালোচনা করেন।

এরপর বিনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নির্বাচনের স্বপক্ষে বক্তব্য রাখতে শুরু করে দিয়েছেন। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতারা-ও বিএনপির সমালোচনা এবং নিজেদের স্বপক্ষে বক্তব্য রাখছেন। নির্বাচন এবং সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে আরো কিছু ধর্মীয় রাজনৈতিক দল চাইছে, তড়িঘড়ি করে নির্বাচন নয়। সংস্কার সম্পন্ন না করে নির্বাচন নয়। তবে সংস্কার দ্রুত শেষ করে নির্বাচন দিতে হবে।

অপরদিকে বিএনপি, বাম এবং সমমনা দলগুলো চাইছে দ্রুত প্রাথমিক সংস্কারের শেষে নির্বাচন। তা-না দেশ রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়ে যাবে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁরা দ্রুত নির্বাচন চাইছে।

ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ ভিন্ন মাত্রায় অবস্থান করছে। আঞ্চলিক এবং পরাশক্তির কাছে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক সমুদ্র অঞ্চল কার নিয়ন্ত্রণে থাকবে ? কেননা বঙ্গোপসাগর হচ্ছে এই নিয়ন্ত্রণের গেট। তাই পরাশক্তিরা চাইছে নিজ নিজ পছন্দের রাজনৈতিক মতাদর্শ বা দল ক্ষমতা গ্রহণ করুক। এই নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য তারা তৎপর হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সাধরণ মানুষের আশা, আকাঙ্ক্ষার কথা ভাবতে হবে। তাঁদের মৌলিক অধিকার এবং চাহিদার কথা ভাবতে হবে। এসব বিবেচনায় নিয়েই বাংলাদেশকে এগোতে হবে।

তবে রাজনীতি বা মানুষের আকাঙ্খা হচ্ছে, ক্ষমতা ও গৌরব বহন করা। এ হচ্ছে, মানুষের সীমাহীন আকাঙ্ক্ষার ভেতর প্রধান। যদিও এগুলো ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত কিন্তু অভিন্ন নয়। মর্যাদার চেয়ে প্রশাসনিক ক্ষমতা বেশি। অন্যদিকে ক্ষমতার চেয়ে সরকার বা রাষ্ট্র প্রধানের মর্যাদা বেশি। সে যাই হোক গৌরব অর্জনের সহজতম পথ হচ্ছে আগে ক্ষমতা লাভ করা। একারণে গৌরব ও ক্ষমতালাভের আকাঙ্ক্ষা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাস্তবে এটা দুটো উদ্দেশ্য বিবেচিত হয় অভিন্ন বলে।

লেখক: শাহীন রাজা, হেড অব এডিটোরিয়াল, মোহনা টেলিভিশন।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button