Top Newsজাতীয়রাজনীতি

রাজপথ আজ দাবি আদায়ের মিছিলে অবরুদ্ধ

শাহীন রাজা : রাজধানীর রাজপথ এখন শুধুই দাবি আদায়ের মিছিল। শিক্ষক থেকে ছাত্র। রিকশা চালক বা বাস ড্রাইভার । এমনকি রেল শ্রমিক। আছে সরকারি কর্মচারী কিংবা পোশাক শিল্পের মজুর। সবাই রাজপথ দখল করে আছে। রাজপথ এখন দাবি আদায়ের পথ !

গত পঞ্চাশ বছরের সকল পাওনা দেনার হিসেব মেটাবে রাজধানীর রাজপথ। দাবি যৌক্তিক বা অযৌক্তিক এটা কোন বিষয় না। দাবি মানতে হবে। দিতে হবে। পঞ্চাশ বছর এমন সময় আসবে দাবি আদায়কারীরা হয়তো জানতেন। তাই তাঁরা মুখ বুঝে অপেক্ষায় ছিলেন। সময় এসেছে দাবি আদায়ের। দাবি তাঁদের মানতে হবে !

পরীক্ষা দেবো না পাশ করিয়ে দিতে হবে। ক্লাস নেবো না, সকল সুযোগ মেটাতে হবে। রাস্তার মাঝখানে বাস দাঁড় করিয়ে রাখবো। কিংবা ইচ্ছেমতো গাড়ি চালাবো আর যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া আদায় করবো। দাপ্তরিক কাজ করি না করি, সেই হিসেব কারো কাছে দিতে তাঁরা বাধ্য নয়।

দাবি আদায়কারীদের কাছে জনগণের কোন দাবি থাকবে না। যাদের ট্যাক্সে তোমরা চলো অথচ তাঁদের কোন কাজটা তোমরা করছো ? জনগণ যদি আওয়াজ তুলে, এই দাবি তোলা লোকগুলো আমাদের কাজে আসে না। তাদের পুষতে কেনো আমরা ট্যাক্স দেবো ?

দাবি দাওয়া কি আপনাদের সঞ্চিত হিসেব ! পঞ্চাশ বছর ধরে জমিয়েছেন। মনে করছেন সঞ্চয় হিসেব ম্যাচুউরড হয়েছে। তাই এখন দাবি আদায়ের মাধ্যমে ভাঙতে হবে ?

আমার মতো সকলেই রাজধানীতে বাস করার জন্য বিভিন্ন ট্যাক্স দিতে হয়। আপনাদের কে অধিকার দিছে, নিজেদের সুবিধার জন্য আমার সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার। সকালে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সময় ঘন্টার পর ঘণ্টা যানজটে সময় গুনতে হয়। আর অস্থিরতা, সময় মতো অফিসে পৌঁছানো হচ্ছে না। দিনশেষে ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফেরার সময়েও যানজট !

আপনাদের এ-ই দাবি আদায়ের মিছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রসূত। কেউ মনে করে আভ্যন্তরীণ। আবার কারো, কারো ধারণা আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অংশ। তাদের এই ধারণার পেছনে, যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। আজকের বিশ্বে স্পষ্ট। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সবকিছুই ঘটে পরাশক্তিদের অঙ্গুলি হেলনে। এই দাবি আদায়ের মিছিল-ও পরাশক্তিদের অঙ্গুলি হেলন হয়তো-বা আছে। হয়তো-বা নয় !

শ্রমিক যদি ন্যায্য পাওনা না পায় অবশ্যই দাবি আদায় তাঁর অধিকার। কিন্তু নিজের অধিকার আদায় করতে যেয়ে আরেকজনের নাগরিক সুবিধা ক্ষুন্ন করা ঠিক ! শিক্ষক, সরকারি, আধা-সরকারি কিংবা বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। আপনারা দাবি আদায় করতে যেয়ে অর্পিত দায়িত্ব থেকে দুরে থাকছেন। কর্মে থাকা অবস্থায়-ও দাবি আদায় করা যায়। আপনাকে যাদের সেবা দেয়ার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে, আপনি তো তাঁদের বঞ্চিত করছেন।

এইযে গত দুদিন রেল ধর্মঘটে সারাদেশের মানুষ বিপাকে পড়ে গেছে। যাঁদের আর্থিক সামর্থ্য আছে তাঁরা বাসে বা গাড়ি ভাড়া করে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে। কিন্তু যাদের আর্থিক সামর্থ্য নেই। অথচ গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে। এইসব উপায়ন্তর না দেখে এই মাঘের শীতে খোলা ট্রাকে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে !

লেখক: শাহীন রাজা, হেড অব এডিটোরিয়াল, মোহনা টেলিভিশন।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button