জাতীয়শিক্ষা

এক সপ্তাহ পর ক্লাসে ফিরেছে তিতুমীর

আপাতত সাতদিন কর্মসূচি স্থগিত থাকবে। এ সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা সবই চলবে। সরকারের দৃশ্যমান সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে পরবর্তীতে কর্মসূচি দেওয়া হবে।“সরকারের ‘আশ্বাস’ পেয়ে আন্দোলন স্থগিত করে একসপ্তাহ পর শ্রেণিকক্ষে ফিরেছে ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা।

তবে সাতদিন পর আশ্বাসের দৃশ্যমান অগ্রগতি না দেখা গেলে ফের আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে রেখেছে তারা।

মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৯টা থেকে ১১টা ক্লাস চলে। এরপর সাড়ে ১২টা থেকে তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা।

আন্দোলনকারীদের নেতা নূর মোহাম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপাতত সাতদিন কর্মসূচি স্থগিত থাকবে। এ সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা সবই চলবে। সরকারের দৃশ্যমান সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে পরবর্তীতে কর্মসূচি দেওয়া হবে।“

তিতুমীরকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণাসহ সাত দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে কর্মসূচি শুরু করছিলেন এ কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরদিন বিকালে শুরু হয় অনশন।

সোমবার শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির আশ্বাস দেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের কোনো সুস্পষ্ট আশ্বাস দেওয়া হয়নি।

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রোহান হোসেন বলেন, “আশা করি সরকার অবশ্যই দাবি মেনে নেবে। না মানলে আবার আন্দোলন। পড়াশোনার পরিবেশটা চাই আমরা, আর ঝামেলা চাচ্ছি না।”

ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরলেও তুলনামূলকভাবে উপস্থিতি কম।

“প্রথম ছিল তো তাই। পরে হয়ত বাড়বে। দাবি পূরণ না হলে সমন্বয়করা হয়ত নতুন কোনো কর্মসূচি দেবে, সেটার সঙ্গে আমাদের একাত্মতা থাকবে।”

আশিকুর রহমান অন্ত বলেন “ঘোষণার পরই আজকের ক্লাস। আশ্বাসের ব্যপারে আশাবাদী হয়ে ক্লাসে ফিরেছি। সবাই মিলেই ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত ছিল।”

গত ২৬ জানুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে সাত কলেজকে মুক্ত করার ঘোষণা দেন।

এই সাত কলেজ নিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছে সরকার। তবে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা চাইছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানটিকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দেওয়া হোক।

ওই দাবিসহ সাত দাবিতে মঙ্গলবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছিলেন তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা। পরদিন বিকাল থেকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আমরণ অনশন’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে কলেজের মূল ফটকের সামনে অনশন শুরু করেন তাদের কয়েকজন।

আর বৃহস্পতিবার থেকে বিরতি দিয়ে চলছিল সড়ক অবরোধ কর্মসূচি, যাকে তারা বলছেন, ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’।

আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘তিতুমীর ঐক্যর’ সাত দফার মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ; ‘বিশ্ববিদ্যালয়’প্রশাসন গঠন করে ২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা এবং শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা কিংবা শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করা।

এসব দাবিদাওয়া নিয়ে সোমবারও সড়ক অবরোধের পর মহাখালীতে রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ফলে দিনভর সড়কে যানজটের পাশাপাশি ট্রেন বন্ধে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। ক্ষোভে পরে যাত্রীরা কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজারকে অবরুদ্ধ করেন।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে রাতে কলেজটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। পরে রাত সোয়া ৯টায় কর্মকর্তারা মহাখালী রেলক্রসিংয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান।

অনশনরত শিক্ষার্থীদের জুস খাইয়ে অনশন ভাঙান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামান ও কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রাণী মণ্ডল।

কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সুস্পষ্ট ঘোষণা না দিলেও শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির আশ্বাস দেন যুগ্মসচিব মো. নরুজ্জামান।

তিনি বলেন, “২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি কোন কাঠামোতে হবে তা আলোচনা করে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা দ্রুত ওই সিদ্ধান্ত জানাব। জমি বরাদ্দ, নতুন বিল্ডিং ইত্যাদি শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল। কলেজের পাশে টিএনটি ও রাজউকের জমি আছে। সেগুলো যদি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তিতুমীরকে দিতে পারলে সেখানে আবাসন সংকট মেটানো সম্ভব।

“আবাসন ও পরিবহন সংকট নিরসনে কার্যক্রম গ্রহণ করে আগামী সাত দিনের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি জানাব। শিক্ষা মান বাড়াতে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমানোর দাবির বিষয়ে আমরা ইউজিসির সঙ্গে আলোচনা করব।”

তিতুমীর কলেজের আইন ও সাংবাদিকতা বিভাগ চালুর দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষা ক্যাডারে এ সাবজেক্ট নাই। এ দাবিটি আরও পর্যালোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।”

শিক্ষক সংকট নিরসনের আশ্বাস দিয়ে নুরুজ্জামান বলেন, “আমরা আগামী সাত দিনের মধ্যে কলেজের পিএইচডি ডিগ্রিধারী ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের পোস্টিংয়ের ব্যবস্থা করব। ১৫২ জন শিক্ষকের পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া ছিল। এটি আরও ত্বরান্বিত করতে আমরা উদ্যোগ নেব।

“তাদের আবাসনের ক্রাইসিস ও শিক্ষা মান বৃদ্ধির জন্য প্রিন্সিপাল মহোদয়ের নেতৃত্বে ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে একটি টিম গঠন করা হবে। তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করবে। তারা সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে আমাদের জানাবেন।”

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে যুগ্মসচিব বলেন, “সেমিস্টার সিস্টেমে পড়াশোনার কথা তোমরা বলছ। সেটি যদি সম্ভব হয়, আমরা পর্যালোচনা করব। ইউজিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে যে কমিটি হয়েছে তাদের কাছে আমরা এ প্রস্তাব রাখব। আমরা আশা করি সবাই মিলে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলব।”

শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি স্থগিত করে শ্রেণিকক্ষে ফেরায় মহাখালী থেকে গুলশানগামী রাস্তায় যান চলাচল এখন স্বাভাবিক রয়েছে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button