রাজনীতি

ঘাতক অস্ত্র তোমাকে বলছি বিদায়

মোহনা অনলাইন

একশত বছর। দুশো বছর। কিংবা আরো একশো বছর পর। তখনও হয়-তো এই পৃথিবী টিকে থাকবে। ঐ সময়ের প্রজন্মের কাছে আমরা অমানিশা বা অন্ধকার সময়ের বাসিন্দা হিসেবে পরিচিত হবো ! তারা বলবে, আমরা ছিলাম মানুষ নামের এক বোকা প্রজাতি ! যারা নিজ প্রজাতিকে হত্যায় বানিয়েছে, লক্ষকোটি টাকা ব্যায়ে মরণঘাতী অস্ত্র ! এক আঘাতে একজন,দু’জন নয়। অযুত-নিযুত হত্যায় বানানো হয়েছে মরণঘাতী অস্ত্রশস্ত্র। এমনটাই ছিল অতীতের মানুষেরা!

আগামী পৃথিবীর মানুষেরা উপহাস করে বলবে, লক্ষকোটি টাকা ব্যয়ে মরণঘাতী অস্ত্র বানিয়েছে। অথচ পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ শিশু অনাহার আর অর্ধাহারে কষ্টের জীবন ন। শিক্ষার আলো তো অনেক আগেই নিভে গেছে। স্বাস্থ্য সেবা, জন্মের পর থেকেই এরা বঞ্চিত। এরা আলো আর আলেয়ার পার্থক্য বুঝে না। বা বুঝতে শেখেনি। এরা শুধু জানে জন্মের ঋণ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শোধরাতে হবে !

আজকের এই পৃথিবীতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যুদ্ধ আর যুদ্ধ। কোথাও জাতিগোষ্ঠী একে অপরের প্রাধান্য বিস্তারের যুদ্ধ। বর্ণ কিংবা ধর্মীয় উন্মাদনায় একে অপরের বিরুদ্ধে। এর পেছন থেকে মদদ দিচ্ছে পরাশক্তি প্রথম বিশ্ব। পৃথিবীতে যুদ্ধ থাকেলই তাদের উৎপাদিত অস্ত্র বিক্রি হবে। অস্ত্রের বাজার নিশ্চিত করতে, জাতিগোষ্ঠী, ধর্ম এবং বর্ণের মধ্যে নানা মত ও পথের কথা বলে যুদ্ধ বাজিয়ে রাখছে। উৎপাদিত অস্ত্র রপ্তানি করে নিজ দেশে অর্থের সমাগম ঘটায়। আর এই অর্থে উন্নত বিশ্বের শিশু এবং মানষেরা উন্নত জীবন ভোগ। আর তৃতীয় বিশ্বের শিশুরা একদিকে বোমা আর গুলি নিরাপদ আশ্রয়ের লক্ষ্যে ছোটাছুটি করে। যে সময় তার শৈশব কাটবে স্কুল, খেলাধুলা আর আনন্দ উল্লাসে। থাকবে না ক্ষুধা এবং দারিদ্র্যতার কষ্ট।

যুদ্ধকালীন সময়ের বিভৎসতা তুলে ধরেছে এশিয়া এবং আফ্রিকার দুই শিশু। একজন হলো তারেক (১০)। বাস করছে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায়। আরেকজন হচ্ছে, সাফা। গৃহযুদ্ধ কবলিত সুদানের কোন এক ভয়ার্ত জীবন পার করছে। একজন, আরেকজন থেকে প্রায় ২০০০ কিলোমিটার দুরে বসবাস। একজন, অপরজনের সাথে কখনোই দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। কিন্তু দুজনেই যুদ্ধের ভয়াবহতা’র তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে। হুবুহু এই কথাটি দুজনেই বলেছে, ” যুদ্ধের কারণে তাদের জীবন থেকে স্কুল বা বিদ্যালয়ের শিক্ষা চুরি হয়ে গেছে ! “

তারেক বলে ” দেখলাম কিভাবে বোমা বা মর্টার সেলের আঘাতে আমাদের স্কুল চুরমার হয়ে যায়। শুধুই চেয়ে, চেয়ে দেখা ! এর কোন শেষ নেই। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আমার বন্ধ হয়ে গেলো। আমি এখন ঘরেই পড়ালেখা করছি।আর কখনোই, কোনদিন হয়তো আর স্কুলে ফেরা হবে না ? “

সাফার স্বপ্ন একদিন সে হৃদরোগের শল্য চিকিৎসক হওয়ার। ” সে জানায়, এখন-ও সেই স্বপ্ন বুকে লালন করছে। গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতা মানসিকভাবে অস্বস্তি’র মধ্যে সময় পার করছে। চারদিকে শুধু মৃত্যু। প্রাণহীন দেহ এদিকসেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। প্রাণে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিক্ষণ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আবাস স্থল পরিবর্তন করতে হচছে। “

তারেক এবং সাফা’র মতো প্রায় ৩ কোটি শিশু যুদ্ধকালীন ভয়াবহতার মাঝে দিন পার করছে। এটা ইউনিসেফের দেয়া হিসাব অনুযায়ী। শুধু সুদানেই ১ কোটি ৬৫ লাখ শিশুর ভাগ্য এমন অমনিসায় কাটছে ! বিবিসির প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে।

বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এর আগেও গাজায় প্রায় ৬০ লাখ শিশু বিদ্যালয় শিক্ষা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
সুদানের শিক্ষা মন্ত্রী আহমেদ খালিফা বিবিসিকে জানান, ” তাঁর প্রায় ১৫ হাজার সরকারী স্কুল ছিল। গৃহযুদ্ধের কারণে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বিদ্যালয় গুড়িয়ে গেছে। বিদ্যালয় গুলোতে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। “

বিবিসি প্রতিবেদনে আফগানিস্তানের শিক্ষা সম্পর্কে উল্লেখ করে। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা’র বিষয়টি । যুদ্ধ এবং পরবর্তী সরকারের নেয়া সিদ্ধান্তের কারণে খুব একটা সুখকর নয়!

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button