জাতীয়

ডিসেম্বরের মধ্যেই বাংলাদেশে নির্বাচন দেখতে চায় অস্ট্রেলিয়া

মোহনা অনলাইন

এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষণকৃত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস আইনসভার সদস্য অ্যাবিজেইল সেলিনা বয়েড। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়ার এই আইনপ্রণেতা সংসদের সভাপতির উদ্দেশে বলেন, আমি নোটিশ দিচ্ছি— আগামী অধিবেশন দিবসে আমি নিম্নলিখিত প্রস্তাব আনব—এই সংসদ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করে যে, ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশের জনগণ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন স্বৈরশাসনের অধীনে ছিল, যা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণতন্ত্রের দমন এবং নির্বাচনী জালিয়াতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি ছাত্র আন্দোলনের ফলে দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পতিত হয় এবং আগস্ট ২০২৪ সালে হাসিনা দেশত্যাগ করেন।

তিনি বলেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, রয়টার্স এবং জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, এই বিক্ষোভের সময় ২ হাজার ৭৩২ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ৩০ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন এবং অন্তত ৩৯ জন শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এই নৃশংসতা, পাশাপাশি ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে সংঘটিত ‘মনসুন বিপ্লব’ গণহত্যায় হাজারো মানুষের মৃত্যুর ঘটনা, বিগত ১৭ বছরের দমনমূলক শাসনের প্রতিফলন, যেখানে রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম এবং সাংবাদিক, কর্মী ও বিরোধী নেতাদের উপর নির্যাতন চালানো হয়েছে।

‘হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা চরমভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচন ব্যাপক ভোট জালিয়াতি, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং কারসাজির কারণে আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দিত হয়েছে। ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির ফলে নির্বাচন ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায়, যার ফলে সরকার প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্মূল করে কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখে,’ বলেন বয়েড।

তিনি বলেন, ‘র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) একটি আধাসামরিক বাহিনী। বাহিনিটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম এবং নির্যাতনের সাথে জড়িত। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে র্যাবের হাতে ২,৬৯৯ জনের বেশি মানুষ অবৈধভাবে নিহত হয়েছে এবং এই বাহিনী সম্পূর্ণ দায়মুক্তি নিয়ে কাজ করে বিরোধী দল ও ভিন্নমতাবলম্বীদের আতঙ্কিত করেছে।

অস্ট্রেলিয়ার এই আইনপ্রণেতা আরও বলেন, ‘হাসিনা প্রশাসনের অধীনে বিচার ব্যবস্থা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন, সমালোচকদের কারাবন্দি করা এবং সরকার-সমর্থকদের রক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। বিচারকদের পক্ষপাতিত্ব, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো কঠোর আইন প্রয়োগ করে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দমন করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে দুর্বল করেছে।’

অস্ট্রেলিয়ার এই আইনপ্রণেতা আরও বলেন, ‘বিচার ব্যবস্থার রাজনৈতিক অপব্যবহার বন্ধ করুক, যার মাধ্যমে—বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে এবং বিচারক নিয়োগ ও রায় প্রদানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ দূর করা হবে। বিরোধী নেতা, সাংবাদিক ও কর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা পর্যালোচনা করে বাতিল করা হবে এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো কঠোর আইন বাতিল বা সংস্কার করা হবে যাতে এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক, যার মাধ্যমে—একটি স্বচ্ছ ও স্বাধীন দুর্নীতি দমন সংস্থা গঠন করে আগের সরকারের আর্থিক অনিয়ম তদন্ত করা হবে, অর্থ আত্মসাৎ, মানি লন্ডারিং এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি দূর করে জনসাধারণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button