বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট সরকার বা শাসনব্যবস্থার ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। সম্পর্ক যে নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক না হয়ে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ ও শ্রদ্ধার ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত, সেটি ভারতকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই কথা বলেন।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত এই সাক্ষাৎকারে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, ভারত থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্য-বিবৃতি, সীমান্ত হত্যা এবং জেলেদের সাথে দুর্ব্যবহার, আদানি পাওয়ার প্রকল্পের ইস্যুগুলোসহ দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উত্তাপ ছড়ানো বেশ কয়েকটি বিষয়ে কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তৌহিদ হোসেন বলেন, যে কোনো দল বা সরকার ক্ষমতায় থাকুক না কেন, আমাদের সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থ ও সম্মানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে। আমি বিশ্বাস করি, উভয় পক্ষই তাদের স্বার্থ বোঝে ও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক থাকা উচিত। আমরা শুধু আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছর কেন দেখব? বিএনপির আমলেও (১৯৯৬-২০০১) তো দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছিল। আমার মনে হয় না, সম্পর্ক নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক হতে হবে।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে ভারতের উদ্বেগের বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দু বা অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলিম বা সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মতোই সমান নাগরিক। তারা সম–অধিকার এবং একই রকম সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারসম্পন্ন নাগরিক। এবং এটা বাংলাদেশ সরকারের কাজ, তারা এটা করছে, দেশের অন্য যেকোনো নাগরিকের মতোই তাদের (সংখ্যালঘুদের) সুরক্ষা দেওয়া। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর ভারতীয় মিডিয়ায় এই বিষয়টি নিয়ে প্রায় ব্যাখ্যাতীত উন্মাদনা সৃষ্টি করা হয়, যার বেশির ভাগই মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, এপ্রিলে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বৈঠক হতে পারে। তবে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি ও সম্মেলনের আগেই এ বিষয়ে আলোচনা হবে।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন জানান, ২০২৪ সালে ২৪ জন বাংলাদেশি সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি বলেন, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভারত প্রায়শই বলে যে সীমান্তে অপরাধ হচ্ছে, তাই গুলি চালানো হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বের কোনো সীমান্তে এভাবে নির্বিচারে মানুষকে হত্যা করা হয় না।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংখ্যালঘু নির্যাতনে জড়িত ছিল না।
আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি যে, আমরা দুটি পর্যায়ে আলোচনা করি, একটি চুক্তি স্বাক্ষরের আগে, (এবং দ্বিতীয়ত) চুক্তি স্বাক্ষরের পরে। আমাদের চুক্তি অনুসারে এগোতে হবে। কিন্তু যদি আমরা মনে করি, এটা সঠিকভাবে করা হয়নি তাহলে আমরা সর্বদা পারস্পরিকভাবে এটা আবার খতিয়ে দেখার জন্য সম্মত হতে পারি। আমার মতে, আমরা আদানি গ্রুপের সঙ্গে এটা দেখব এবং এটাকে আরও যৌক্তিক করার চেষ্টা করব।



