Top Newsসংবাদ সারাদেশ

বঙ্গোপসাগর থেকে মালাক্কা এবং বাংলাদেশের রাজনীতি

মোহনা অনলাইন

বঙ্গোপসাগর মালাক্কা প্রণালী। এই পথে এখন জলপরী আর সোনালী মাছের চলাচল। তাই জেলে আর করপোরেট ট্রলার ভীর করেছে। জলপরী আর সোনার মাছ, কে তুলবে ঘরে। এই খেলায় খেলিছে, বিশ্ব মহাজনদের দল। সমুদ্র পথটি দখল নিতেই নেমেছে তারা।

বর্তমান বিশ্ব রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে ‘বঙ্গোপসাগর থেকে মালাক্কা প্রণালী ‘ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সমুদ্র পথটি যেই নিয়ন্ত্রণ করবে, তার হবে আগামী পৃথিবী। কেননা এই পথ হলো ” এশিয়া প্যাসিফিক ” অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ রেখা। এই পথ দিয়েই প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ বানিজ্য চলাচল করে !

মালাক্কা প্রণালী পশ্চিমে ভারত মহাসাগরের সাথে পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগরের সংযোগ করেছে। এদিকে ভারত মহাসাগর পার হয়ে চীন সাগর হয়ে উল্টো দিকেই অস্ট্রেলিয়া। এছাড়া প্রশান্ত মহাসাগর দিয়ে ইউরোপ পর্যন্ত।
মালাক্কা প্রণালী, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে মালয় উপদ্বীপ এবং ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের মধ্যে অবস্থিত একটি সংকীর্ণ সমুদ্র পথ। এটি ৮০৫ কিমি (৫০০ মা) সমুদ্রপ্রণালী। ১৪০০ থেকে ১৫১১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে দ্বীপমালা উপর শাসিত মালাক্কা সালতানাতের নামে এর নামকরণ করা হয়।
অপরদিকে বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় পশ্চিম এশিয়া, আফ্রিকার অন্তরীপ, পূর্ব আফ্রিকা, দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকা। তেল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সাথে যোগাযোগ স্থাপন।
এইসকল বিবেচনায়, বঙ্গোপসাগর থেকে মালাক্কা প্রণালী পৃথিবীর শক্তিধর দেশগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই এই সমুদ্র পথটি শক্তিধর দেশগুলোর শক্তি পরীক্ষা চলছে।

বঙ্গোপসাগর থেকে মালাক্কা প্রণালী নিয়ন্ত্রণে ২০২১ সালে “কোয়াড ” গঠন হয়। ২০২১ সালে অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগাকে ওয়াশিংটনে আমন্ত্রণ জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চীন বিরোধী জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে কোয়াড। ” কোয়াড্রেট্রাল সিকিউরিটি ডায়লগ ” সংক্ষেপে কোয়াড হয়ে ওঠে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা জোট।
একসময়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোয়াড নিয়ে উৎসাহে ভাটা পড়ে। তখন তারা চলতি বছরের ১৩ মার্চ “অকাস ” নামে আরেকটা জোট গঠন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়াসহ এই তিন দেশের সমন্বয়ে ‘ অকাস ‘ গঠন হয়। চলতি বছরের ১৩ মার্চ সোমবার ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগোতে অকাস গঠন হয়। ঐদিন এই চুক্তির বিষয়ে বিশদ তুলে ধরেন দেশগুলোর শীর্ষ নেতারা। এ চুক্তির আওতায় থাকবে- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম টেকনোলজি ও সাইবারের মতো বিষয়গুলো।
চুক্তি অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার নেতারা পরবর্তী প্রজন্মের পরমাণু চালিত সাবমেরিনের একটি বহর তৈরির পরিকল্পনা করছেন। মিত্র দেশগুলো যুক্তরাজ্যে রোলস-রয়েসের তৈরি চুল্লিসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি নতুন বহর তৈরি করতে একসঙ্গে কাজ করবে।
মূলত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলা করার লক্ষ্যেই এই চুক্তি করা হয়েছে।

এদিকে এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে সুসংহত করার জন্যে মার্কিন আইন সভায় ” বার্মা এ্যাক্ট ” পাস করা হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে বার্মা এ্যাক্ট দু’হাজার উনিশ বিল পাশ হয়েছে ২৬৩-১৫ ভোটে । ১৫৬ সংখ্যক বিধায়ক এ সময় অনুপস্থিত ছিলেন।এ আইনে বর্মায় আটক রাজনৈতিক বন্দী এবং বিবেক বন্দীদের মুক্তির দাবী জানানো হয়েছে এবং এ আইন কার্যকর করতে, জোরদার করতে পররাষ্ট্র দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । আইন সভার একজন সদস্য বলেন, এই বিলটি গ্রহণ করার কারণ হলো এর মাধ্যমে বর্মার সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের জন্য তাদেরকে জবাবদিহি নিশ্চিৎ করা যাবে।

এই বিল এবং বাইডেন প্রশাসনের ২০২৩ সালের প্রতিরক্ষা বাজেটে তার অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশ, ভারতসহ এ অঞ্চলের মনোযোগ দাবি করে। বাইডেন প্রশাসনের এ রকম পদক্ষেপে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘মানবিক ও উন্নয়ন সহায়তা’র ধারায় অনেক পরিবর্তন আনতে পারে। যে পরিবর্তন কেবল মিয়ানমারে নয়, আশপাশের দেশগুলোয় ইউএসএইডের তৎপরতায়ও দেখা যেতে পারে।

এদিকে এই অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণের জন্যই গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে বিভিন্ন দেশে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ। ওয়াল বেল্ট ওয়ান রোড প্রকল্প। এবং সর্বশেষ ” ব্রিকস ” জোট গঠনের প্রচেষ্টা। রাশিয়া এখান থেকে দুরে থাকলেও চীনের সাথে সহযোগী থাকছে। দখল নিতে পারলে লভ্যাংশের একটা বড় অংশ পাবে এই আশায়।
চীন এই অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনের মধ্য দিয়ে তার আধিপত্য প্রকাশে উদ্যোগ নেয়। মিয়ানমার তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। শ্রীলঙ্কার সাথেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। কিন্তু গণ আন্দোলনে তা স্তিমিত হয়ে আসে। পাকিস্তানের সাথেও ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক । ইমরান সরকারের পতনের পর নতুন মোড় নিয়েছে। পাকিস্তানের আগামী নির্বাচনের পর কি হবে তা বলা যায় না।

ভারতের সাথে দীর্ঘ বৈরিতা। তবে আঞ্চলিক স্বার্থে আগামীতে কোন দিকে মোড় নেবে তা স্পষ্ট করে বলা যাবে না ?

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button