
যার দেয়া রক্ত এখন পর্যন্ত প্রায় ২৪ লাখ অস্ট্রেলিয়ান শিশুর জীবন বাঁচিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার সেই জেমস হ্যারিসন আর নেই। ৬০ বছর ধরে দুই সপ্তাহ পর পর রক্ত দিয়ে আসছেন তিনি।
সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হ্যারিসনের রক্তে এক ধরনের বিরল অ্যান্টিবডি, অ্যান্টি-ডি ছিল। এটি গর্ভবতী মায়েদের জন্য ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, যাদের রক্ত তাদের অনাগত শিশুরা আক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে। অস্ট্রেলিয়ান রেড ক্রস ব্লাড সার্ভিস জানিয়েছে, ১৪ বছর বয়সে একটি বড় অস্ত্রোপচারের সময় রক্ত গ্রহণের পর তিনি দাতা হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
তিনি ১৮ বছর বয়স থেকে তার রক্তের প্লাজমা দান শুরু করেন এবং ৮১ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি দুই সপ্তাহে তিনি রক্ত দিতেন। ২০০৫ সালে তিনি সর্বাধিক রক্তের প্লাজমা দান করার বিশ্ব রেকর্ডটি অর্জন করেছিলেন। ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনি এই খেতাবটি ধরে রেখেছিলেন। ওই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন পুরুষ তাকে ছাড়িয়ে যান। হ্যারিসনের মেয়ে ট্রেসি মেলোশিপ বলেছিলেন, তার বাবা ‘কোনো খরচ বা ব্যথা ছাড়াই এত জীবন বাঁচাতে পেরে খুব গর্বিত।’ মেলোশিপ এবং হ্যারিসনের দুই নাতি-নাতনিও অ্যান্টি-ডি টিকা গ্রহণকারী।
অ্যান্টি-ডি গর্ভস্থ শিশুদের ভ্রূণ এবং নবজাতকের হেমোলাইটিক রোগ বা এইচডিএফএন নামক একটি মারাত্মক রক্তের ব্যাধি থেকে রক্ষা করে। গর্ভাবস্থায় এই অবস্থা দেখা দেয়, যখন মায়ের লোহিত রক্তকণিকা তার ক্রমবর্ধমান শিশুর রক্তকণিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না।
মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তখন শিশুর রক্তকণিকাকে হুমকি হিসেবে দেখে এবং তাদের আক্রমণ করার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে। যা শিশুর মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এর ফলে গুরুতর রক্তাল্পতা, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে অ্যান্টি-ডি হস্তক্ষেপ তৈরির আগে, এইচডিএফএন ধরা পড়া প্রতি দুই শিশুর মধ্যে একজন মারা যেত। হ্যারিসনের রক্তে অ্যান্টি-ডি-এর পরিমাণ এত বেশি কিভাবে হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়, তবে কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৪ বছর বয়সে তিনি যে বিপুল রক্ত সঞ্চালন পেয়েছিলেন তার সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে।
লাইফব্লাড অস্ট্রেলিয়ার ওয়াল্টার এবং এলিজা হল ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল রিসার্চের সঙ্গে কাজ করছে, যাতে হ্যারিসন এবং অন্যান্য দাতার রক্তরোগ প্রতিরোধক কোষের প্রতিলিপি তৈরি করে ল্যাবে অ্যান্টি-ডি অ্যান্টিবডি তৈরি করা যায়। গবেষকরা আশা করছেন, ল্যাবে তৈরি অ্যান্টি-ডি একদিন বিশ্বব্যাপী গর্ভবতী নারীদের সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।