জাতীয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়ায় রেলপথ অবরোধ

সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ও প্রতিষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগ দেওয়া এবং দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে বঞ্চিত করার প্রতিবাদে ও বিকেন্দ্রীকরণের দাবিতে রেলপথ অবরোধ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী ধূমকেতু ট্রেনটি সঠিক সময়ে রাজশাহীতে পৌঁছাতে পারবে না বলে ধারণা করছে রেল কর্তৃপক্ষ।

বুধবার (৫ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজার সংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী রেললাইন অবরোধ করেন তারা। এর আগে শিক্ষার্থীরা জোহা চত্বর থেকে মিছিল নিয়ে স্টেশন বাজারে আসেন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্র-শিক্ষক এক হও, ঢাবি সিন্ডিকেট ভেঙে দাও, বিকেন্দ্রীকরণ বাংলাদেশ গড়ো’, ‘পেতে চাইলে মুক্তি, ছাড়ো ঢাবি ভক্তি’, ‘ঢাবিবাদ নিপাত যাক, বাংলাদেশ মুক্তি পাক’, ‘সিন্ডিকেট না মুক্তি? মুক্তি মুক্তি’, ‘ঢাকা না বাংলাদেশ? বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইউসুফ বলেন, ‘রাষ্ট্রের উপদেষ্টা থেকে শুরু করে প্রশাসনের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোতে ঢাবিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। গতকাল‌ দেখলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সম্ভাব্য শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে প্রথমে রাবির ড. এম আমিনুল ইসলাম স্যারকে নিয়ে সংবাদ হলো। কিন্তু আবার কিছুক্ষণ পর দেখলাম সংবাদ পরিবর্তন হয়ে গেছে। রাবির স্থলে ঢাবির এক স্যারকে নিয়োগ দেওয়ার সংবাদ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। এই ঘটনা সত্যিই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য অপমানজনক। এ অবস্থায় ছাত্রদের পাশে শিক্ষকদের দাঁড়ানো উচিত বলে আমার মনে হয়। সবার উদ্দেশে বলবো আসুন ঢাবি সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে একটি বিকেন্দ্রীকরণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’

এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘এই নতুন বাংলাদেশে আবার যদি বৈষম্যের সৃষ্টি করা হয় তাহলে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই বাংলাদেশের মানুষ আবার সেই ফ্যাসিস্ট আচরণকে সমূলে উৎপাটন করবো। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপককে শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে এমন একটি খবর ভেসে এসেছিল। তার কিছুক্ষণ পর আমরা জানতে পারি অন্য কেউ হচ্ছেন শিক্ষা উপদেষ্টা। রাবি শিক্ষককে সরিয়ে ঢাবি থেকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। জুলাইয়ের আগে প্রতিটি ক্যাম্পাস ছিল ফ্যাসিবাদ নির্মূলের আঁতুড়ঘর- কিন্তু জুলাইয়ের পর দেখছি প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আর কোনও ক্যাম্পাসে কি যোগ্য মানুষ নেই? অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, পিএসসি, ইউজিসিসহ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় একমাত্র যোগ্য ব্যক্তিরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকমণ্ডলী, যা বৈষম্য ছাড়া কিছুই না। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। আমরা চাই সরকার ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করুক। এখন সময় এসেছে বিপ্লবের হিস্যা সবাইকে বুঝিয়ে দেওয়ার।’

রেলপথ অবরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অধিকার আদায় বা সংস্কারে সাময়িক অসুবিধা হবেই। আমাদের আর ঢাবির মধ্যে পার্থক্যটা এটাই। ঢাবি অধিকার আদায়ের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা শাহবাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ব্লকেড করে দেয়, রাজুর মতো জায়গা আটকে দেয়। আর আমরা রেল ব্লকেড দিতেই একদল ভোগান্তির কথা চিন্তা করছেন। জুলাইয়ের পর উত্তরবঙ্গ নিয়ে চিন্তা না থাকলে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গকে আলাদা করে দিই দেখি ঢাকার এই উত্তরবঙ্গ লাগে কি না। যারা রেল ব্লকেড করবে তারাও রোজাদার। আপনাদের এই সহনশীল আচরণ এবং মানবিক মূল্যবোধ অবশ্যই পজিটিভ কিন্তু দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে সাময়িক রাষ্ট্র অচল করে দিয়ে নিজেদের মূল্য সরকারকে বোঝানো গুরুত্বপূর্ণ।’

কোনও ট্রেন আটকে আছে কিনা জানতে চাইলে রাজশাহী রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘আপাতত কোনও ট্রেন আটকে নেই। তবে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী ধূমকেতু ট্রেনটির শিডিউল বিপর্যয় হবে। একদিন শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে আগামী সাত দিন ট্রেনের শিডিউল ঠিক থাকবে না। তাই আমি সবাইকে বলবো আমাদের প্রতিবাদের ভাষা এভাবে ভোগান্তি সৃষ্টি না করে অন্যভাবেও করা যায়।’

এর আগে মঙ্গলবার রাতে সালাউদ্দিন আম্মার এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দেন। প্রথমে সকাল ৯টার কথা বলা হলেও পরে বেলা ১১টায় শিক্ষার্থীদের জোহা চত্বরে উপস্থিত হওয়ার কথা জানান তিনি।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button