Top Newsআন্তর্জাতিক

এবার পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

মোহনা অনলাইন

সম্প্রতি পানামা খালের ওপর পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ক্ষমতায় আসার পরই পানামা খাল নিয়ে কথা বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার এই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথে মার্কিন কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।

যদিও এতে বড় ধরনের শিপিংয়ে বিঘ্ন ঘটবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে বিষয়টি লাতিন আমেরিকায় চীনা বিনিয়োগের জন্য একটি সতর্ক সংকেত হিসেবে দেখা দিতে পারে। হংকংভিত্তিক মালিকের কাছ থেকে পানামা খালের দুটি প্রধান বন্দর কিনতে সম্মত হয়েছে মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ সংস্থা ব্ল্যাকরক। ফলে বৈশ্বিক বন্দর ব্যবস্থাপনায় নতুন মেরুকরণ ঘটতে চলেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

‘চীন পানামা খাল পরিচালনা করছে’ বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ২০ জানুয়ারির উদ্বোধনী ভাষণে যে দাবি করেছিলেন, তা ছিল মূলত ১৯৯৭ সাল থেকে হংকং-ভিত্তিক কোম্পানি হাচিসন পোর্টস দ্বারা পরিচালিত বন্দরগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে।

এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা। একই সঙ্গে তারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক আলোচনায় কোম্পানিটির ভূমিকা নতুন হলেও এর রাজনৈতিক প্রভাব খুব একটা ছিল না। এ নিয়ে শিপব্রোকিং ও শিপিং পরিষেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান বানচেরো কোস্টা-র গবেষণা প্রধান র‍্যালফ লেসজিনস্কি বলেন, ‘এটি বরাবরই একটি বাণিজ্যিক উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। যার কোনো রাজনৈতিক অর্থ বা প্রভাব ছিল না’।

চুক্তি অনুযায়ী, হংকংভিত্তিক সিকে হাচিসন তাদের ব্যবসা ব্ল্যাকরক, গ্লোবাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার পার্টনার্স (জিআইপি) ও টার্মিনাল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের একটি কনসোর্টিয়ামের কাছে বিক্রি করছে। কোম্পানির বিবৃতিতে গত মঙ্গলবার জানানো হয়েছে, এই গোষ্ঠী পানামায় দুটি বন্দরের মালিকানা ও পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের ৯০ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করবে।

সমুদ্র বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পথের এই অধিগ্রহণকে যুক্তরাষ্ট্রের বিজয় হিসেবে দেখছেন ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের আমেরিকাস প্রোগ্রামের পরিচালক রায়ান বার্গ। তাঁর মতে, এর মধ্য দিয়ে খালের নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটাবে। রয়টার্সকে রায়ান বার্গ বলেন, আমেরিকা মহাদেশে চীনের সঙ্গে কৌশলগত প্রতিযোগিতায় এটি যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল বিজয়।

ট্রাম্প বারবার অভিযোগ করেছেন, পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ চীনের হাতে। বছরের শুরুতেই তাঁর হুমকি ছিল, যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ জলপথটি আবারও নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন পানামাকে চীনা প্রভাব কমানোর জন্য চাপ দেওয়ার পাশাপাশি দাবি করে, বন্দরে বেইজিংয়ের সম্পৃক্ততা খালের নিরপেক্ষতাসংক্রান্ত চুক্তি লঙ্ঘনের শামিল।

সিকে হাচিসন আশা করছে, এ চুক্তি থেকে তারা ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ পাবে। ফলে তাদের পক্ষে শেয়ারহোল্ডারদের ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হবে। বর্তমানে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। চুক্তির ঘোষণার পর গতকাল বুধবার সকালে হংকংয়ের পুঁজিবাজারে সিকে হাচিনসনের শেয়ারের দাম ২২ শতাংশ বেড়েছে।

গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ের পর কানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও পানামাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ বলে দাবি করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখনই বন্দর ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে সিকে হাচিসন। চুক্তি আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার পর যখন কানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও পানামা দখলের কথা বলা শুরু করেন, তখন পানামার ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। সিকে হাচিসন বুঝতে পারে, এটি রাজনৈতিক সমস্যা এবং তারা সেখানে থেকে বেরিয়ে আসার চিন্তা শুরু করে।

সিকে হাচিসন যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ বিশ্বের ২৩টি দেশের ৪৩টি বন্দর পরিচালনা করে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, মেক্সিকো ও অস্ট্রেলিয়াও তারা বন্দর পরিচালনা করে। অর্থাৎ নতুন এই চুক্তির ফলে শুধু পানামা খালের বন্দর নয়, সিকে হাচিসনের বৈশ্বিক বন্দর কার্যক্রমের বড় অংশ ব্ল্যাকরক ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানায় চলে যাচ্ছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই চুক্তি বন্দর ব্যবসায় বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিতবাহী। বৈশ্বিক বাণিজ্যে এর বড় প্রভাব পড়তে পারে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button