Top Newsজাতীয়

দেশে এখনো ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যায়নি: প্রধান উপদেষ্টা

মোহনা অনলাইন

স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠন, যেখানে আইনের শাসন থাকবে, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে এবং বৈষম্যহীন পরিবেশ গড়ে উঠবে। তবে এখনো সে লক্ষ্য পূরণ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

দীর্ঘদিন ধরে এদেশের মানুষকে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। দুর্নীতি, লুটপাটতন্ত্র ও গুম-খুনের রাজত্ব চালিয়ে দেশে একটি ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছে।” মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এসময় তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

কালরাতের নৃশংসতার কথা স্মরণ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আজ ২৫ মার্চ, মানব সভ্যতার ইতিহাসে কলঙ্কিত এক হত্যাযজ্ঞের দিন। ১৯৭১ সালের আজকের রাতে পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র, ঘুমন্ত বাঙালির ওপর নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে হাজারো মানুষকে হত্যা করে। “২৫ মার্চ থেকেই এ দেশের মানুষ সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। ৯ মাসের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।”

তিনি বলেন, কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এই বছর সরকার ছয় জন বিশিষ্ট নাগরিককে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেছে। তারা সবাই বাংলার সূর্যসন্তান।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম একজন বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী। পৃথিবীর নামকরা সব বিজ্ঞানীরা তাকে চেনেন। তিনি সবসময় প্রকৃতি ও মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত ছিলেন। আল মাহমুদ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম উজ্জ্বল কবি। তার কবিতা বহু কবি, লেখক, পাঠককে অনুপ্রাণিত করেছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘ব্র্যাক’-এর প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ও এর পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। লন্ডনের ফ্ল্যাট বিক্রির টাকা দিয়ে তিনি ব্র্যাক গড়েছিলেন। প্রান্তিক গরিব মানুষের জীবনমান উন্নয়নসহ বহুমুখী কাজে ব্র্যাক এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, “আজকের এই অনুষ্ঠান আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, জীবদ্দশায় সম্মাননা পাওয়া একজন ব্যক্তির জন্য, তার পরিবার ও দেশের জন্য অনেক আনন্দের। কিন্তু মরণোত্তর পুরস্কারে সেই আনন্দ পাওয়া যায় না, কারণ যাঁকে আমরা সম্মান জানাচ্ছি, তিনি আমাদের মাঝে নেই।”

তিনি আরও বলেন, “ভবিষ্যতে আমাদের একটি নিয়ম করা উচিত—যারা জীবিত আছেন, তাদেরকেই আগে পুরস্কৃত করা। তারা আমাদের জাতিকে মহান উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। তাদের যথাযথ সম্মান জানানো আমাদের দায়িত্ব।”

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “এই পুরস্কার প্রদান শুধুমাত্র ব্যক্তি নয়, বরং সমগ্র জাতির সম্মানের প্রতিফলন। আমরা যদি গুণীজনদের জীবদ্দশায় সম্মান জানাতে না পারি, তাহলে জাতি হিসেবে আমরা অকৃতজ্ঞ হয়ে থাকব।”

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button