আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তির টাকা ছাড় পেতে যেসব শর্ত দিয়েছে, তা পর্যালোচনা করতে আগামী ২৪ এপ্রিল ঢাকায় আসছে সংস্থাটির একটি স্টাফ মিশন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে চতুর্থ কিস্তির টাকা নিয়ে। কারণ, এর জন্য রিজার্ভের যে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তা কীভাবে অর্জন করা হবে সেটি নিয়ে চিন্তিত সরকার।
প্রকৃত বা নিট রিজার্ভ হলো দায়হীন বা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ। নিট রিজার্ভের হিসাব কীভাবে হবে, সেই সূত্রও ঋণ দেওয়ার সময় বাংলাদেশকে জানিয়ে দেয় আইএমএফ। ঋণের শর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট সময় পরপর, কী পরিমাণ নিট রিজার্ভ রাখতে হবে, সেটিও ঠিক করে দেয় সংস্থাটি। সেই অনুযায়ী, প্রতি তিন মাস পরপর শর্ত মেনে রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরেও রিজার্ভের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। পরে সরকারের অনুরোধে রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্য কমিয়ে দেয় আইএমএফ।
দেশে ডলারসংকটের মধ্যে আর্থিক হিসাব ও চলতি হিসাবে ঘাটতি হওয়ায় ২০২২ সালের জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ঋণের আবেদন করে বাংলাদেশ। ছয় মাস পর সংস্থাটি গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি (৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন) ডলার ঋণ দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। বলা হয়, ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে পাওয়া যাবে এ অর্থ।
আইএমএফ পর্ষদ ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করার দুই দিন পর ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির অর্থ ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পেয়ে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় কিস্তি ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পেল ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর। চলতি মাসে যে মিশনটি আসছে, তারা আলোচনা করবে তৃতীয় কিস্তির শর্তগুলো নিয়ে।
জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আইএমএফের দেওয়া উল্লেখযোগ্য শর্তসমূহ পূরণ করেছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য অর্জন, নিয়মিত বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা, বাংলাদেশ ব্যাংকে পর্যাপ্ত সংরক্ষিত মূলধন (রিজার্ভ মানি) রাখা, সামাজিক সুরক্ষায় ব্যয় নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় সীমার মধ্যে রাখা এবং স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা ইত্যাদি।
মার্চেও রিজার্ভের লক্ষ্য পূরণ হয়নি : চলতি বছরের মার্চ মাসেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী নিট বা প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়েছে, তার শর্ত অনুযায়ী মার্চের শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা ১ হাজার ৯২৬ কোটি ডলার। কিন্তু প্রকৃত রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের কম।
এর আগে গত ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর আর ডিসেম্বরের শেষেও আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে বাংলাদেশের অনুরোধে রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্য কমিয়ে দেয় সংস্থাটি। মার্চের শেষে সংশোধিত লক্ষ্যও অর্জন হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফ কত রিজার্ভ রাখতে বলেছিল, আর আমরা কত রেখেছি, এটা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কথা বলবে না। আইএমএফের দল ঢাকায় এলে তাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হবে। তখন দেখা যাবে কী হয়।



