শাহীন রাজা : বোমায় বিধ্বস্ত দেয়ালের নীচে এক কিশোরের মৃত্যুহীন ভবিষ্যৎ ! এই অল্প বয়েসে কিশোর জেনে গেছে, মানুষ দানবের থেকেও ভয়ঙ্কর ! সে জেনে গেছে, জীবন – মৃত্যর মাঝামাঝি দিগন্ত রেখায় দাঁড়িয়ে আছে একুবিংশ সভ্যতা! এই পৃথিবীতে মৃত্যু আর ধ্বংসের বাইরে আর কিছুই নেই। এই বয়সেই তার উপলব্ধি এই ভূখন্ডে জন্মানোর ভবিষ্যৎ হচ্ছে, মৃত্যু।
গত কয়েক ঘন্টায় গাজার ১২ হাজার বর্গমিটার এলাকা সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইজ়রায়েলি বাহিনী। বিধ্বস্ত এলাকায় খোলা আকাশের নীচে ঠাঁই দাঁড়িয়ে মৃতু অপেক্ষায় আছে,গাজা অধিবাসী। কখন আকাশ থেকে নেমে আসবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা। ছুটে আসবে মার্কিন নির্মিত অত্যাধুনিক মিসাইল। শুধুই মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা। পৃথিবীর কোথাও কেউ তাঁদের বাঁচাতে আসবে না !
ইসরাইলী বাহিনী বোমা আর মিসাইল নিক্ষেপ করে থেমে থাকেনি। গাজায় কোন প্রকার ত্রাণ যাতে ঢুকতে না পারে তার জন্য সবকটি পথ বন্ধ করে দিয়েছে। খাবার নেই, সুপেয় পানি নেই। ২২টি পানির উৎস (ওয়াটার ওয়েল) ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে খাবার পানীর কোন জোগান নেই।
এমনকি এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা বলতেও কিছু আর নেই। নোংরা-আবর্জনায় ভরে গিয়েছে এলাকা। সেই সঙ্গে পচাগলা দেহাংশ। এমন এক ভয়াবহ অবস্থা, জটিল রোগ সংক্রমণের ভয় পাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। রাফায় এমন এক ভয়াবহ অবস্থা, সেখানকার ১২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটাও আর কাজ করছে না। বিস্ফোরক রোবট ব্যবহার করে সব কয়টি হাসপাতাল ধ্বংস করে দিয়েছে ইজ়রায়েলি বাহিনী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ শতাধিক মসজিদ সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে।
জন্মসূত্রে শিশুরা জেনে আসছে,পূর্ব পুরুষদের হারানো ভূখণ্ড ফিরে পেতেই এই যুদ্ধ। সে জানে না, এ যুদ্ধ জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের যুদ্ধ। পরাজিত আদর্শ ভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। বোধহয় রাজতন্ত্র বা অভিজাতদের শাসন ব্যবস্থা নিরাপদ রাখার জন্য এই যুদ্ধ। কিংবা করপোরেট বানিজ্যিক গোষ্ঠী’র নিরাপদ বানিজ্য প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। সে শুধু জেনে গেছে, এই যুদ্ধে বেঁচে থাকা বাড়তি পাওনা ! এমন এক ভয়াবহ অবস্থায় গাজার শিশু-কিশোরদের সামনে মৃত্য ছাড়া আর কোন ভবিষ্যৎ নেই।
গাজা’র হাসপাতালে বোমা হামলা যুদ্ধে নতুন নিয়েছে। যা এক অশুভ নতুন যাত্রা। অতীত এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এই ঘটনায় প্রথমেই ইসরায়েলের নাম আসে। অথচ ইসরায়েল অস্বীকার করছে ! ইসরায়েল জানায়, তাদের অতীত বোমা হামলার সাথে কোনোই মিল নেই।
এই যুদ্ধে একটা বিষয় স্পষ্ট। বিশ্বের এক নম্বর শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং তার দোসর পশ্চিম ইউরোপ ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডে পূর্ণ মদত রয়েছে। এর বাইরে শক্তি আছে। তারা হয়তো ফিলিস্তিনি নিরহ জনগণকে গুটি হিসেবে ব্যবহার করেছে।তাই দুঃসময়ে কেউ প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি ! অদৃশ্য কোন শক্তি ঐ অঞ্চলের গোটা জনগোষ্ঠীকে গুটি হিসেবে ব্যবহার করেছে। চলমান বিশ্বের গতিপথ ভিন্ন দিকে ঘুড়িয়ে দেয়া।
দেয়ালে চাপা পড়া ভবিষ্যত ফিলিস্তিনি শিশি-কিশোরদের নিরাপদ নিশ্চিত বসবাসের নিরাপত্তা দিতে হবে। এটা এখন পৃথিবীর জরুরী কর্তব্য। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে ৷
এখনই এই ধরনের দানবদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে,পৃথিবীর মানুষদের। তা না হলে এই অদৃশ্য দানবেরা পৃথিবী ধ্বংস করে দেবে। আধুনিক মারণাস্ত্রের আঘাতে গোটা বিশ্ব গাজা’র মতোই ধুলোয় ধুসর হয়ে যাবে কোন এক সময় !



