
ভারতে পালিয়ে থাকা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতাদের জন্য কলকাতার নিউটাউনের ‘রোজডেল গার্ডেন’ নামক অভিজাত আবাসন প্রকল্প কার্যত এখন দলীয় কার্যালয়ে রূপ নিয়েছে। এতে দেশটির পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতাসহ বিভিন্ন এলাকা এখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
রোজডেল গার্ডেনের ১১-সি নম্বর ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। পাশাপাশি ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে আওয়ামী লীগের কার্যত ‘অস্থায়ী প্রধান কার্যালয়’ বানিয়েছেন তিনি। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সেখানে চলে বৈঠক, নীতিনির্ধারণী আলোচনা এবং সরকারের বিরুদ্ধে ‘কৌশলগত পরিকল্পনা’। দলটির অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো, নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং দেশের অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এই ফ্ল্যাট থেকেই হচ্ছে নানান পরিকল্পনা।
একই সঙ্গে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাখতেও তারা যাবতীয় ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন এই ভবনে বসে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা এবং সাবেক এমপি-মন্ত্রী অনেকেই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে রীতিমতো সংসার পেতেছেন। কাটাচ্ছেন আয়েশি জীবন। বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি যোগ দিচ্ছেন নানা ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানেও। কেউ কেউ ছেলে-মেয়েদেরও ভর্তি করিয়েছেন সেখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকও রীতিমতো কলকাতায় সংসার পেতেছেন। তার স্ত্রী, মেয়ে তার সঙ্গে সেখানে থাকেন। তবে চিকিৎসার জন্য মাঝে বেশকিছু দিন দিল্লিতে ছিলেন নানক। নানকের পিএস বিপ্লবও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কলকাতা বসবাস করছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ভারতে স্ত্রীকে নিয়ে বাসা ভাড়া করে থাকছেন। তার স্ত্রী আগে কানাডায় থাকলেও এখন দিল্লিতে তার সঙ্গেই বসবাস করছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম স্ত্রীকে নিয়ে কলকাতার নিউমার্কেটের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকছেন।
তাদের এই অবস্থান শুধু রাজনৈতিক পালিয়ে থাকা নয়, বরং রীতিমতো আরামদায়ক বাসস্থান, সামাজিক অনুষ্ঠান অংশগ্রহণ এবং ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগাযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত দলটির ইতিহাসের প্রতি ইঙ্গিত করে অনেকেই বলছেন—‘রোজডেল গার্ডেন’ এখন সেই আওয়ামী লীগের নতুন ঘাঁটি।