চৈত্রের তাপ দাহ শেষ। বৈশাখের শুরুতেই নেমেছে বৃষ্টি। এই শহরে। নগরবাসীর জীবনের চালচিত্রে স্বস্তি। গতকাল বিকেল থেকেই নামিল বৃষ্টি। গতকাল স্বস্তির এই শীতল বাতাসে নির্বাচনী হাওয়া। বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো যেমন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচনের একটা সময়। অন্তর্বর্তী সরকারের অংশীদারদেরও নির্বাচনের ব্যপারে কোন মতবিরোধ নেই। তবে দুই পক্ষের মধ্যে সময়ের কিছুটা দূরত্ব আছে। জনগন মনে করছে, আলোচনার মধ্য দিয়ে এই দূরত্ব-ও কমে আসবে।
গত বুধবার ১৬ এপ্রিল, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সাথে সাক্ষাত করেন বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম। সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টাকে বিএনপি মহাসচিব এবছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তাব রেখেছেন। সাক্ষাৎ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন প্রধান উপদেষ্টাকে আমরা বলেছি, ‘ ডিসেম্বরে নির্বাচনের কাট অফ আউট টাইম ‘ এরপরে হলে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। ‘ তবে বিশৃঙ্খলা নিয়ে তিনি কোন ব্যাখ্যা দেননি। বিষয়টি খোলাসা করা প্রয়োজন না হলে। তা না হলে জনমনে আশঙ্কা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত বুধবার জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান-ও, আগামী রমজানের আগে বলে জানান। মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদেরকে একথা বলেন। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর থেকে জামায়াত বলে আসছে। নির্বাচনের আগে সংস্কার এবং স্বৈরাচারের বিচার করতে হবে।
গত কয়েকদিনের বক্তব্যে নির্বাচনের বিষয়টি সামনে চলে আসছে। অনেকে মনে করছেন, লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাক্ষাতের পরেই তারা আগের জায়গা থেকে সরে আসছে। ৫ আগষ্টের পরে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেয়ার শুরু থেকেই বিএনপি নির্বাচনের কথা বলে আসছে।
একই দিন, নির্বাচন কমিশনার মোঃ আনোয়ারুল ইসলামও নির্বাচনের তারি সম্পর্কে একই কথা বলেন। দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কক্ষে এ নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, ‘রিপিটেডলি ঘোষিত যে টাইমলাইন, সেই টাইমলাইনকে ঘিরেই আমরা এগোচ্ছি। সেটি হচ্ছে ডিসেম্বর।’
তবে ভিন্ন মত প্রকাশ করে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বুধবার মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানান,মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তারা অংশ নেবে না।
তবে নির্বাচন আগে না সংস্কার আগে এ নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোতে নির্বাচনী হাওয়া লেগে গেছে। গতকাল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অফিসে এনিয়ে ছিল দিনভর আলোচনা। একটি দলের অফিসে যেয়ে শুনা গেল নেতা কর্মীদের বলছে, আগামী দিনে তারা কি চাইছে তা ব্যানারে শহরের বিভিন্ন মোড়ে, মোড়ে টানানোর নির্দেশ দেন। আরেক অফিসে গিয়ে শোনা যায়, তারা খুব শীঘ্রই নির্বাচন নিয়ে সমমনা দলের সাথে আলোচনায় বসবেন।
নির্বাচন নিয়ে সাবেক এক নির্বাচন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির সাথে আমরা দীর্ঘদিন এনিয়ে কথা বলে আসছি। অথচ আমাদের সাথে কথা না বলেই, প্রধা উপদেষ্টার আলোচনাকালে নির্বাচনের সময় বলে আসে। আমরা কিছুটা বিস্মিত হয়েছি। তিনি একথাও বলেন, তার মানে এই নয় আলোচনা শেষ হয়ে গেছে। উল্লেখিত বিষয় এবং আগামীর কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা হবে। নির্বাচনের কথা না বললেও স্পষ্ট ধারণা হয়, তিনি এবং তাঁর দল আগামী নির্বাচন নিয়েই কথা বলবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিপিবি এবং বাসদের নেতৃত্বে ‘ গণতান্ত্রিক বাম জোট ‘ আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই শরীক ছয় বাম দল নির্বাচন নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবে। এছাড়া বড় একটি রাজনৈতিক দলের সাথে জোটবদ্ধ নির্বাচন করা যাবে কি যাবে না তা নিয়ে বড় ঐ দলের সাথে আলোচনা করবে।
নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলের সাথে, সাথে নির্বাচন নিয়ে কথা বার্তা শুরু করে দিয়েছেন। নির্বাচন আলাপকালে প্রথম কথাই হচ্ছে, বিতারিত দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না। কেউ বলছে, যারা গত পনেরো বছর এতো অন্যায়, অত্যাচার করলো। দূর্ণীতি করে টাকার পাহাড় বানালো। এবং বিদায়ের আগে শত-শত মানুষ হত্যা করে, তারা কিভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়। আরেক দলের কথা হচ্ছে, যারা অন্যায় করেছে অবশ্যই তাদের বিচার হবে। তাই বলে দলের নিরপরাধী লোককে নির্বাচনের বাইরে রাখা ঠিক হবে।
এর বাইরে আলোচনায় আছে, কোন কোন এলাকায় কোন দল থেকে কোন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। ভোটররা, প্রার্থীদের সালতামামী তুলে আনছে আলোচনায়। ভোটারদের আলোচনা শুনে মনে হয়েছে যত বড় দলের প্রার্থীই হোক না কেন, নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হলে নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়া কঠিন হবে।
সবশেষে মনে হয়েছে, রাজনৈতিক দলের নেতাদের কি ভাবনা তা তাঁদের। তবে সাধারণ মানুষের কাছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আস্থা আছে। তারা মনে সরকার সঠিক সময়ে একটা সুষ্ঠু, সুন্দর এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন জনগণকে উপহার দেবে। এর ব্যত্যয় হলে, অন্তর্বর্তী সরকারের সকল সম্মান বিনষ্ট হবে। সাধারণ মানুষের অনেকের একটাই কথা বলেছেন, প্রধান সংস্কার হচ্ছে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন !



