
লেজার প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতির মাধ্যমে ইরান এশিয়ার পাশাপাশি বৈশ্বিক পরিসরেও এক শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে গেছে। বৈজ্ঞানিক ও প্রতিরক্ষা খাতে লেজারের বহুমুখী প্রয়োগ বিশ্বব্যাপী এ প্রযুক্তিকে বিশেষ গুরুত্বের আসনে বসিয়েছে। শিল্প, চিকিৎসা, যোগাযোগ এবং প্রতিরক্ষা খাতের উন্নয়নে লেজার এখন এক অপরিহার্য উপাদান।
পার্সটুডের তথ্য অনুযায়ী, ইরান ১৯৭০ সাল থেকেই লেজার প্রযুক্তির ওপর বিস্তৃত কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। পারমাণবিক শক্তি সংস্থার তত্ত্বাবধানে লেজার গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে দেশটি, এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস লেজার, সেমিকন্ডাক্টর লেজারসহ বিভিন্ন উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন লেজার তৈরিতে দক্ষতা অর্জন করে। এমনকি ২০১৭ সালের মিউনিখ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতেও অংশগ্রহণ করে ইরান।
উল্লেখযোগ্য অর্জন
২০২০ সালের ডিসেম্বরে ইরান সফলভাবে ১০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন লেজারের পরীক্ষা চালায়, যার মাধ্যমে দেশটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন লেজার উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের কাতারে স্থান পায়। ২০২২ সালে ‘বিনা’ নামে একটি লেজার-নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা আরও একবার প্রমাণ করে ইরানের সামরিক খাতে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত পঞ্চম লেজার, ফোটোনিক্স ও কোয়ান্টাম প্রদর্শনীতে ইরান লেজার প্রযুক্তির তিনটি নতুন সাফল্য তুলে ধরে। এরপর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বৃহৎ সামরিক মহড়ায় ‘সুরুজ’ নামের লেজারভিত্তিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সফল পরীক্ষা চালানো হয়, যা আকাশপথে শত্রুপক্ষের হুমকি মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রভাব
চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো শীর্ষ প্রযুক্তিগত শক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইরানও লেজার প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রতিরক্ষা ও গবেষণায় উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন লেজার তৈরি করে আঞ্চলিক শক্তির তকমা অর্জন করেছে দেশটি। ‘সাইলেন্ট হান্টার’ এবং ‘সুরুজ’ এর মতো উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইরানকে এশিয়ার অগ্রগামী প্রযুক্তিগত শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইরান চিকিৎসা, যোগাযোগ, জ্বালানি এবং পরিবেশ সুরক্ষার মতো খাতে লেজার প্রযুক্তি বিস্তারে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। দক্ষ জনশক্তি ও প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতার ফলে আগামী দিনগুলোতে ইরান এই খাতে আরও বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।