আন্তর্জাতিক

গাজায় ৪৮ ঘন্টায় ৯০ জনেরও বেশি নিহত

মোহনা অনলাইন

গত ৪৮ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৯০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চাইলেও বারবার তা প্রত্যাখ্যান করছে হামাস। ফলে ইসরায়েল ও তাদের সাধারণ জনগণকে এর চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।

ইসরায়েলি হামলায় যখন গাজায় প্রতিদিন পাখির মতো মানুষ মরছে, তখন এমন দাবি করলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, শনিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইডিএফের হামলায় কমপক্ষে ৫৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘ভোর থেকে অন্তত ৫৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। কিন্তু এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অনবরত হামলা চলছে।’

গত ৪৮ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকায় ৯০ জনের বেশি নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যেখানে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৫১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, বর্তমানে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহের কাছে শাবৌর ও তেল আস সুলতান এলাকায় আইডিএফের সেনারা ঘাঁটি গেড়েছে। সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, এ দুই ঘাঁটি থেকেই সর্বশেষ হামলাগুলো পরিচালনা করেছে নেতানিয়াহুর বাহিনী।

ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা গাজার বিভিন্ন অংশে হামলা আরও জোরদার করবে এবং সেখানে “নিরাপত্তা অঞ্চল” গড়ে তুলবে। এরই অংশ হিসেবে, গত ছয় সপ্তাহ ধরে গাজায় খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের প্রবেশ বন্ধ রয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সহায়তা সংস্থাগুলো জানায়— সহস্রাধিক শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগছে এবং বেশিরভাগ মানুষ দিনে একবারও ঠিকমতো খেতে পারছে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান ড. হানান বালখি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ইসরায়েল রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবিকে আহ্বান জানিয়েছেন যেন তিনি গাজা অবরোধ তুলে নিতে ইসরায়েলের উপর চাপ প্রয়োগ করেন, যাতে ওষুধ ও অন্যান্য সহায়তা ঢুকতে পারে। তিনি বলেন, “আমি চাই তিনি নিজ চোখে পরিস্থিতি দেখে বুঝুন।”

রাষ্ট্রদূত হাকাবি শুক্রবার জেরুজালেমের পবিত্র পশ্চিমপ্রাচীর পরিদর্শনে যান, যেটিকে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম পবিত্র স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি সেখানে একটি প্রার্থনার চিঠি রেখে দেন, যেটি তিনি জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজ হাতে লিখেছেন। হাকাবি বলেন, হামাসের হাতে থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা চলছে।

এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাস-নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১,২০০ মানুষকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে অপহরণ করে। পরবর্তীকালে বিভিন্ন অস্ত্রবিরতি ও চুক্তির মাধ্যমে অধিকাংশ জিম্মিকে মুক্ত করা হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রতিরোধ অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫১,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এই যুদ্ধে গাজার অধিকাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে এবং খাদ্য উৎপাদনের প্রায় সব ক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে। জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ এখন গৃহহীন হয়ে, তাঁবু বা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বাস করছে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button