Top Newsআন্তর্জাতিক

বাণিজ্য শুল্ক ও অনিশ্চয়তায় বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে বড় কাটছাঁট আইএমএফের

মোহনা অনলাইন

বাণিজ্য শুল্ক ও নীতিগত অনিশ্চয়তার প্রেক্ষিতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে বড় রকমের কাটছাঁট করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বড় নেতিবাচক সংশোধনের শিকার হয়েছে।

আইএমএফ জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ২.৭ শতাংশ দিলেও তা এখন কমিয়ে ১.৮ শতাংশ করা হয়েছে। আইএমএফ সতর্ক করে বলেছে, উচ্চ শুল্ক এবং নীতির অনিশ্চয়তা বিশ্ব অর্থনীতিতে ‘গুরুতর মন্দা’ ডেকে আনতে পারে।

যুক্তরাজ্যের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমিয়ে ধরা হয়েছে ১.১ শতাংশ। তবে জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির তুলনায় যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি তুলনামূলক বেশি হারে বাড়বে বলে মনে করছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে আইএমএফ বলছে, উন্নত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যে মুদ্রাস্ফীতি সবচেয়ে বেশি—৩.১ শতাংশ—যার প্রধান কারণ হলো জ্বালানি ও পানির খরচ বৃদ্ধি।

এই পূর্বাভাস এমন এক সময়ে এসেছে যখন ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়ের-অলিভিয়ার গৌরিঞ্চাস বলেন, ‘গত চার বছরের কঠিন ধাক্কার পর বৈশ্বিক অর্থনীতি এখনও ক্ষতচিহ্ন বহন করছে এবং আবারও কঠিন পরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।’

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বলেন, তিনি ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ার জেরোম পাওয়েলকে বরখাস্ত করার কোনো পরিকল্পনা করছেন না, যদিও সম্প্রতি তাঁকে কড়া সমালোচনার মুখে ফেলেছিলেন।

ট্রাম্প চলতি বছরে একাধিকবার শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে চীনা পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক, যার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এছাড়া বেশিরভাগ দেশের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে, যদিও অনেক দেশের ক্ষেত্রে তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে।

ট্রাম্পের মতে, এসব শুল্ক দেশীয় পণ্যের ব্যবহার বাড়াবে, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করবে এবং দেশি বিনিয়োগে উৎসাহ দেবে। তবে আইএমএফ বলছে, এই ধরণের শুল্ক বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে তুলবে।

গৌরিঞ্চাস বলেন, ‘এই অনিশ্চয়তার কারণে অনেক কোম্পানিই বিনিয়োগ স্থগিত করবে, খরচ কমাবে।’

আইএমএফের হালনাগাদ পূর্বাভাস অনুযায়ী:

  • বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি: ২০২৫ সালে হবে ২.৮%, পূর্বে ছিল ৩.৩%

  • ২০২৬ সালে এই হার দাঁড়াবে ৩.০%

  • যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার সম্ভাবনা: এখন ৪০%, যা গত অক্টোবরে ছিল ২৫%

  • চীনের প্রবৃদ্ধি: ৪.০% (পূর্বে ছিল ৪.৬%)

  • কানাডা: ১.৪% (পূর্বে ২.০%)

  • মেক্সিকো: ০.৩% সংকোচন, পূর্বে ১.৪% প্রবৃদ্ধি

যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, উচ্চ ঋণ খরচ এবং ব্যয়বহুল ইউটিলিটি বিলের কারণে ভোক্তাদের খরচ হ্রাস পাওয়াই মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আইএমএফ। তবে ২০২৫ সালে যুক্তরাজ্যের প্রবৃদ্ধি কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়ে ১.৪ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।

যুক্তরাজ্যের চ্যান্সেলর র‍্যাচেল রিভস বলেন, ‘এই পূর্বাভাস প্রমাণ করে, ইউরোপের জি-৭ দেশের মধ্যে যুক্তরাজ্য এখনও সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি।’ তবে কনজারভেটিভ দলের মেল স্ট্রাইড বলেছেন, ‘এই পূর্বাভাস লেবার সরকারের অর্থনৈতিক নীতির ওপর জনগণের আস্থার ঘাটতি তুলে ধরছে।’

বিশ্লেষকদের মতে, শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত থাকলেও অনিশ্চয়তা এতটাই প্রকট যে, সেটি পূর্বাভাসের ওপর বড় ধরনের প্রভাব রাখছে না। আইএমএফের মতে, ভবিষ্যতের বাণিজ্য নীতি কোন দিকে যাবে, তা অনিশ্চিত; ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতির গতিপথ সম্পর্কে এখনই নিশ্চিত হওয়া কঠিন।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button