Top Newsআন্তর্জাতিক

পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে পাকিস্তান

মোহনা অনলাইন

ভারত-শাসিত কাশ্মিরে বন্দুকধারীদের হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক চরম অবনতির দিকে যাচ্ছে। দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা নিচ্ছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভারতের পক্ষ থেকে ঐতিহাসিক সিন্ধু পানি চুক্তি একতরফাভাবে স্থগিতের ঘোষণা।

এই ঘোষণার জবাবে পাকিস্তান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, তারা তাদের পানির ন্যায্য অধিকার রক্ষায় পূর্ণ সামরিক শক্তি প্রয়োগে দ্বিধা করবে না, যার মধ্যে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনাও বাদ যায় না। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এই তথ্য জানিয়েছে।

হামলা ও ভারতীয় সিদ্ধান্ত

সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে পর্যটকদের লক্ষ্য করে ভয়াবহ হামলার ঘটনায় ভারত ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটির (CCS) বৈঠক ডেকে সিন্ধু পানি চুক্তি ‘স্থগিত’ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি পাকিস্তানের ওপর চাপ তৈরির একটি কৌশলগত পদক্ষেপ।

চুক্তি নিয়ে পাকিস্তানের কড়া প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তান বলেছে, সিন্ধু পানি চুক্তি শুধু দুই দেশের মধ্যকার চুক্তিই নয়, এটি বিশ্বব্যাংকের তত্ত্বাবধানে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি। এটি একতরফাভাবে বাতিল বা স্থগিত করা আইনি দিক থেকে সম্ভব নয়। পাকিস্তান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, চুক্তির আওতায় থাকা পানির প্রবাহ বন্ধ করা হলে তা “যুদ্ধ ঘোষণার” শামিল হবে।

পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (NSC) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “পানি হলো আমাদের জীবনরেখা। ২৪ কোটির বেশি মানুষের অস্তিত্ব এর সঙ্গে জড়িত। তাই পানির প্রবাহ বন্ধ করার যেকোনো প্রচেষ্টা যুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং জাতীয় শক্তির সম্পূর্ণ পরিসরে জবাব দেওয়া হবে।”

পরমাণু অস্ত্রের হুমকি?

বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে “সম্পূর্ণ জাতীয় শক্তি” ব্যবহারের যে হুঁশিয়ারি এসেছে, তা সরাসরি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনার দিকেই ইঙ্গিত করে। কেউ কেউ মনে করেন, যদি ভারত কোনও জলাধার বা বাঁধ নির্মাণ করে, যা পাকিস্তানের পানির প্রবাহে হস্তক্ষেপ করে, তাহলে পাকিস্তান সেই অবকাঠামো “পূর্ণ সামরিক শক্তি” দিয়ে ধ্বংস করতে পারে।

একজন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকের মন্তব্য: “যদি ভারতের কোনো পদক্ষেপ পাকিস্তানের পানি সরবরাহ হুমকির মুখে ফেলে, তাহলে পাকিস্তান তা ধ্বংস করতে পিছপা হবে না—চাই সেটা কনভেনশনাল অস্ত্র হোক কিংবা পারমাণবিক।”

রাজনৈতিক উদ্দেশ্য?

পাকিস্তানের সাবেক সিন্ধু পানি কমিশনার জামাত আলী শাহ মনে করেন, ভারতের এই সিদ্ধান্ত মূলত একটি রাজনৈতিক চাল। তিনি বলেন, “এই চুক্তি একতরফাভাবে বাতিল করা আইনি দিক থেকে সম্ভব নয়। এটি একটি স্থায়ী চুক্তি, যার জন্য দুই দেশের পারস্পরিক সম্মতির প্রয়োজন হয়।”

ভারতের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, তারা “স্থগিত” শব্দটি ব্যবহার করছে, “বাতিল” নয়—যা ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাংকের সামনে একটি কৌশলগত অবস্থান হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

ভবিষ্যতের ঝুঁকি:

বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে যদি ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে পানি সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় বন্ধ করে দেয়, তাহলে পাকিস্তানে বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে। এর পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক পাকিস্তানি অর্থনীতিও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button