মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত সম্পন্ন ও কার্যকরের দাবি জানিয়েছে দেশের অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সংগঠন ‘এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন’।আজ (২৬ এপ্রিল) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এক মাসের মধ্যে উচ্চ আদালতে রায় ঘোষণার এবং রায় ঘোষণার সাত কার্যদিবসের মধ্যে তা কার্যকরের আহ্বান জানায়। সংগঠনটি হুঁশিয়ারি দেয়, দাবি না মানলে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা। এরপর তার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস মামলা দায়ের করেন। র্যাবের তদন্তে প্রমাণিত হয়, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। মামলার বিচার ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শেষ হয়। আদালত টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেন, ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সাতজনকে খালাস দেন। বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল পর্যায়ে বিচারাধীন রয়েছে, বিচারপতি মুস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি সগীর হোসেনের বেঞ্চে।
সংগঠনের সদস্য সচিব লেফটেন্যান্ট (অব.) সাইফুল্লাহ খাঁন সাইফ অভিযোগ করেন, প্রদীপ কুমার দাশ তার চাকরিজীবনে ক্ষমতার অপব্যবহার করে একাধিক অপরাধে জড়িয়েছিলেন। তিনি তথাকথিত ক্রসফায়ারে অন্তত ১৪৫ জনকে হত্যা করেন এবং অপরাধমূলক আয়ের মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন করেন। ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে জমি দখলের চেষ্টার কারণে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তও করা হয়েছিল। তিনি দাবি করেন, প্রদীপের মতো কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিক ও মাদক ব্যবসায়ীদের যোগসাজশ বিচারের বিলম্বের জন্য দায়ী।
সংগঠনটি সিনহা হত্যার পাশাপাশি শিশু আছিয়া, পারভেজ, তোফাজ্জল হত্যা এবং জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার দ্রুত বিচারও দাবি করেছে। এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, দেশের আইনের শাসন ও মানবাধিকারের সুরক্ষায় মেজর সিনহা হত্যা মামলাটি একটি দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতে পারে। তারা সতর্ক করে দিয়েছে, যদি এই মামলার রায় কার্যকর না হয়, তাহলে জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির আশা ভেঙে পড়বে এবং রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলার প্রতি আস্থা দুর্বল হবে।
সংগঠনটি সরকারের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন কোনো চাপ, প্রলোভন বা রাজনৈতিক প্রভাব বিচার কার্যক্রমকে প্রভাবিত করতে না পারে। জনগণের দৃষ্টি এখন এই মামলার দিকে, এবং স্বচ্ছ ও সময়মতো বিচারের মাধ্যমেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তারা।



