
ঢাকার গুলশান, মিরপুর, তেজগাঁওসহ সারা দেশে রয়েছে তিন শতাধিক বিঘা জমি। রাজধানীর গুলশানে ৩৩ কাঠার ওপর ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটসহ দুটি বাড়ি, বনানীতে ফ্ল্যাট এবং তেজগাঁও শিল্প এলাকায় দুটি বাণিজ্যিক ফ্লোরের মালিক। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে শতকোটি টাকার বেশি ডিপোজিটসহ নামে বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পদ। ছয়টি কোম্পানি নিয়ে রয়েছে একটি গ্রুপ অব কোম্পানিও। সারা দেশে এই বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান মোখলেসুর রহমান। অথচ কর ফাঁকি দিতে সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন তিনি। আয়কর নথিতে সম্পত্তির পরিমাণ দেখিয়েছেন মাত্র ২১ কোটি টাকা। শুধু তিনিই নন, অঢেল সম্পদের মালিক তার স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েও।
তথ্য বলছে, মোখলেছুর রহমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের যশোর-৩ আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদের প্রতিষ্ঠান জেমকন গ্রুপে বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিলেন। ১৯৯৬ সাল হতে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই সময় তিনি এমপি নাবিলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত কর্মচারী হয়ে ওঠেন। একটি পোল ফ্যাক্টরীও লিখে দেন তারা। এরপর থেকেই তিনি ২০০৯ সাল হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শাসন আমলে এমন কোন অপকর্ম নেই যে তিনি করেনি।
সবশেষে অঢেল কালো টাকা দিয়ে নিজের ও ছেলের নামে এসবিএসি ব্যাংকের ২ টি শেয়ার ক্রয় করেন এবং রাতারাতি ব্যাংকের পরিচালক বনে যান। পরিচিতজনরা বলছেন, হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে মোখলেছুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে। তাদের সম্পদ কল্পকাহিনীকেও হার মানিয়েছে। তার ছেলের বয়স ১৮ হওয়ার সাথে সাথেই ট্যাক্স ফাইলে ২৫ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। আবার মেয়ের বয়স ১৮ হওয়ার সাথে সাথে বনে গেছেন প্রায় ৯ কোটি টাকার মালিক। কিভাবে হয়েছেন তা কোনোদিন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর, সিআইসি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন জানতে চায়নি।
মোখলেছুর রহমানের নামে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে সব মিলিয়ে ৩৩২ বিঘা সম্পত্তি পাওয়া গেছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় হাজার কোটি টাকারও উপরে এবং তেজগাঁও লিংক রোডের শান্তা টাওয়ারে ৬ টি বাণিজ্যিক ফ্লোর পাওয়া গেছে যার আনুমানিক বাজার মূল্য ২৫০ কোটি টাকার মতো। এছাড়াও তার নামে বসুন্ধরা আবাসিকের আই ব্লকে ১০ বিঘা সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে যার বাজার মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। এছাড়াও তাহার নামে বনানীর কামাল আতার্তুক এভিনিউতে ১৫ তলা বাণিজ্যিক ভবন পাওয়া গেছে যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৩০০ কোটি টাকা প্রায়। এছাড়াও তাহার নামে নিজ জেলাতে বিশাল বাগান বাড়ি রয়েছে যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এছাড়াও তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে কয়েকমো কোটি টাকার এফডিআর। এছাড়াও ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীর নামে গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, মিরপুর সহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে বাড়ি ও অঢেল সম্পত্তি রয়েছে যা ট্যাক্স ফাইলে দেখানো হয়নি।
মোখলেছুর রহমান চেয়াম্যান পদে বসার পরপরই অতিরিক্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে অনৈতিক কাজের জন্য চাপ দিলে তারা রাজি না হওয়ায় তাদেরকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। এমনকি তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন গাইড লাইন অনুসরণ না করেই ডিএমডি নাজিমুদ্দৌলাকে এই ব্যাংকে নিয়োগ দিয়েছেন। একইসঙ্গে এনআরবিসি ব্যাংকের অতিরিক্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টর রবিউলকে এই ব্যাংকের অতিরিক্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। রবিউলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা চলমান রয়েছে।
টেলিভিশন, পত্রিকা ও অনলাইন গণমাধ্যমে মোখলেছুর রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে প্রমাণসহ খবর প্রকাশিত হওয়া সত্ত্বেও অদৃশ্য শক্তির হস্তক্ষেপে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এখনো বহাল তবিয়তে সাউথ বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ দখল করে বসে আছেন। এমন দুর্নীতিবাজ, পাচারকারী, কালো টাকার মালিক, সাবেক ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ডোনার ও সুবিধাভোগী মোখলেছুর রহমানকে দ্রুত চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে ব্যাংকিং সেক্টরে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি সমাজের সচেতন নাগরিকদের। একইসঙ্গে তাদের দাবি, সব অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে-এমন প্রত্যাশা সবার।