Top Newsসংবাদ সারাদেশ

যুদ্ধ ও অমীমাংসিত শান্তি

মোহনা অনলাইন

যুদ্ধ। এবং যুদ্ধ। এই উপমহাদেশের আকাশে যুদ্ধের কালো মেঘ ! ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ, যুদ্ধ খেলা চলছে। এই অঞ্চলের মানুষ যুদ্ধের আশঙ্কায় সময় গুনছে। আমার-ও এমনই মূহুর্তে যুদ্ধের খোঁয়াড়ে ঢুকতে যাচ্ছি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা দিতে মানবিক করিডোরের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই সিদ্ধান্ত কি মানবিক হবে ? না আমরা সংঘাতে জড়িয়ে যাচ্ছি। সরকার এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের সাথে কি আলোচনা দরকার ছিল না !

এই উপমহাদেশে যুদ্ধ,যুদ্ধ খেলা আবারও শুরু হয়েছে। পহেলগাঁও সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি। দুই দেশ যে কোন মূহুর্তে যুদ্ধ শুরু করে দিতে। পৃথিবী বিশেষ করে এই অঞ্চলের মানুষ আতঙ্কিত। যুদ্ধের পূর্ব ব্যবস্থা হিসেবে, পাকিস্তান মুখি ভারত তার সকল নদী প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পাকিস্তান তার আকাশ সীমা ভারতের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। পাশাপাশি দুই দেশ, দুই দেশের দিকে মারণাস্ত্র তাক করে আছে। যুদ্ধ বাঁধলেই দুই দেশের সাধারণ মানুষ এর মাশুল দিবে।

প্রতিবেশী’র মানুষের প্রতি দুই দেশের সরকারের এই হলো মানসিকতা ! দুইপারের লোকদের ধর্ম হয়তো ভিন্ন। কিন্তু সংস্কৃতি, ভাষা, খাদ্যাভাস অনেকটাই কাছাকাছি। তারপরও মারতে হবে, যুদ্ধ করতে হবে। এই হলো বর্তমান সভ্যতা !
এদিকে বাংলাদেশ মানবিক সহযোগিতার সিদ্ধান্তে কোন ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছে, তা ভবিষ্যত বলে দেবে।
গত রবিবার ( ২৭ এপ্রিল) পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন,মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোর খোলা হবে। তিনি বলেন, রাখাইনে বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা দিতে মানবিক করিডোরের বিষয়ে নীতিগতভাবে রাজি বাংলাদেশ। পাশাপাশি তিনি সতর্ক করে বলেন, তবে এটি করতে হলে বাংলাদেশের দেওয়া শর্ত তাঁদের পালন করতে হবে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ কালে বলেন, দেশের স্বার্থে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা যাবে না। সংগঠনটির সঙ্গে যতখানি প্রয়োজন ততখানি যোগাযোগ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারটা পরে। তৌহিদ হোসেন আবারও বলেন, এটা মানবিক সহায়তার চ্যানেল হবে। পাশাপাশি তিনি বলেন,

এটি তো আমাদের স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। মিয়ানমারের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী তো আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। এবং আমরা তাদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছি।

সেই ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে যা কিছু প্রয়োজন সেটা তো আমাদের করতে হবে। আমাদের স্বার্থ সেখানে সংশ্লিষ্ট আছে।
সাধরণ মানুষ একটাই শঙ্কা মানবিক করিডোর দিয়ে যাতে হাঙর, কুমীর না প্রবেশ করে। কেননা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাইডেন সরকারের আমলে মার্কিন প্রতিরক্ষায় ১২৮ বিলিয়ন ডলার কংগ্রেস সভায় পাশ করিয়ে নিয়েছে। এরমধ্যে ‘বার্মা অ্যাক্ট’-ও আছে।

তবে বর্তমান বিশ্বেই, যুদ্ধের বিকল্প হিসেবে নতুন পররাষ্ট্র নীতি চালু হয়েছে। তা হচ্ছে, যুদ্ধ নয় আলোচনার মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মনে করে সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে উদ্ভুত সমস্যার সমাধান আলোচনা। আলোচনা এবং আলোচনা। একারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে সমস্যা দেখা দিলে তা আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান করা হয়। এই অঞ্চলের মতো পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যেও রাষ্ট্রীয় এবং জাতিগত অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ জন্য সংঘাত হয়নি আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান করা হয়েছে। এবং নিজেদের মধ্যে যাতে সংঘাত না দেখা দেয় তার জন্য ইইউ বারবার ঘন ঘন শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে থাকে। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তারা বারবার ঐক্য পুনর্ব্যক্ত করে আসছে। এবং ঐক্য বজায় রেখে মিলেমিশে বসবাস করছে।

এমনকি সম্প্রতি সম্প্রতি, কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত কলম্বিয়ানদের বহনকারী দুটি সামরিক বিমানকে অবতরণে বাধা দেওয়ার পর ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে কূটনৈতিক উত্তেজনায় জড়িয়ে পড়ে কলম্বিয়া। এর প্রতিক্রিয়ায়, আঞ্চলিক ব্লক, ল্যাটিন আমেরিকান এবং ক্যারিবিয়ান রাজ্যের সম্প্রদায়, পরিস্থিতির সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি জরুরি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের কথা বিবেচনা করে, যদিও এই ধারণাটি শেষ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছিল। তবে সংঘাত বা যুদ্ধ বেধে যায়নি আমেরিকা এবং কলম্বিয়া’র সাথে।

একইভাবে এশিয়ার ছয়টি উপসাগরীয় রাজতন্ত্র দ্বারা গঠিত একটি আঞ্চলিক সংস্থা। উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেছে। এই পদক্ষেপগুলি সম্মিলিত আত্মরক্ষার দিকে বিশ্বব্যাপী প্রবণতা প্রতিফলিত করে। তাদের কূটনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও, একই অঞ্চলের দেশগুলি বহিরাগত চাপ মোকাবেলা করে আসছে।
দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে-ও একে অপরের প্রতি আশ্বাসের অভাব ছিল। বিশেষ করে ভারত এবং পাকিস্তানকে ঘিরে এই অঞ্চলে প্রায়শই উত্তেজনা দেখা দেয়। এবারও তাই হয়েছে। এধরনের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ‘সার্ক’ গঠনের উদ্যোগ নেন। এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৮০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সার্ক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সার্ক হলো আটটি সদস্য দেশ নিয়ে গঠিত হয়। এবং একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা কাঠামো নিয়ে যাত্রা শুরু করে।

তবে, সংস্থাটি কার্যকরভাবে সুপ্ত অবস্থায় রয়ে গেছে, কারণ এটি ২০১৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ভারতের বিরোধিতার আর কোনও শীর্ষ সম্মেলন হয়নি।

ভারত শুরু থেকেই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রস্তাবটিকে ভালোভাবে নেয়নি। এই অঞ্চলের প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে ভারতের, বহুপাক্ষিক আলোচনার চেয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাকে অগ্রাধিকারের পছন্দ। ভারত মনে করে, সম্মিলিত পদক্ষেপের ফলে তার প্রভাব হ্রাস পাবে। অবশেষে ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টারের যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ‘সার্ক’ মেনে নেয়। ঐ সময় সোভিয়েত প্রভাব রোধ করতে জিমি কার্টার সার্কের পক্ষ নেন ।

২০০৫ সালে, সার্ক আফগানিস্তানকে তার অষ্টম সদস্য হিসেবে যুক্ত করে এবং জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ইইউর মতো দেশগুলিকে পর্যবেক্ষক হিসেবে স্বাগত জানায়। তবে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সশস্ত্র সংঘাত এবং সীমান্ত সন্ত্রাসবাদের কারণে প্রায়শই সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ব্যাহত হয়। ২০১৬ সালে মোদি পাকিস্তান-ভিত্তিক ইসলামপন্থী জঙ্গিদের দ্বারা পরিচালিত সন্ত্রাসী হামলার অজুহাত তুলে সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সার্কের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সদস্যভুক্ত একটি দেশ সম্মেলনে অংশ নেয়ায় অনিচ্ছা প্রকাশ করলে সম্মেলন স্থগিত হয়ে যায়। তাই ২০১৪ সালের পর আর কোন শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন পর ভারতের সাথে আরেকটি আঞ্চলিক সংস্থা গঠন করে। যার নাম দেয়া হয়, বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিমসটেক) ​​-। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ঢাকায় সদর দপ্তর, বিমসটেক সাতটি দেশ নিয়ে গঠিত: পূর্ব দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে থাইল্যান্ড। অথচ এই অঞ্চলের আরেকটা পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তানকে এই সংস্থার বাইরে রাখা হয়। এর পর থেকে দুই দেশের মধ্যে আবারও বিশ্বাস, অবিশ্বাসের সঙ্কট শুরু হয়।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button