
কানাডার নির্বাচনে মার্ক কার্নি জিতেছে। হেরেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! ট্রাম্প-বিরোধী মনোভাবের তীব্র প্রতিক্রিয়া কার্নির বিজয়। কানাডার জনগণ তাঁদের দেশ সম্পর্কে ট্রাম্পের নেতিবাচক বক্তব্য প্রত্যাখান করেছে। নির্বাচনের দিন-ও ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ছিলেন ব্যালটে। সাথে আবারও বলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হওয়া উচিত, কানাডার ! কানডার জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যের জবাব, ব্যালটের মধ্য দিয়ে দেয়। এবং লিবারেল পার্টি চতুর্থ বারের মতো সরকার গঠনে নির্বাচিত হলো !
জনগণের ঐকবদ্ধ ইচ্ছের কাছে সকল অপ-রাজনীতি বা শক্তি পরাভূত হয়। এর জন্য যুদ্ধ বা বিপ্লবের মতো কর্মকাণ্ডের খুব একটা প্রয়োজন হয় না। জনগণের শুধুমাত্র অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমেই সম্ভব। যা কানাডায় হয়েছে। বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য তোয়াক্কা করেনি কানডার জনগণ। তারা ভোটের মধ্য দিয়ে ট্রাম্পকে জবাব দিয়েছে !
নির্বাচনের আগে নির্বাচনী প্রচারের কার্নি বলেছিলেন, ‘আমি কয়েক মাস ধরে যে বিষয়ে সতর্ক করে যাচ্ছি—যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ভূমি, আমাদের সম্পদ, আমাদের পানি, আমাদের দেশ নিয়ে নিতে চায়। এগুলো কেবল নিষ্ক্রিয় হুমকি নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাদের ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছেন, যেন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের কিনে নিতে পারে। এমনটা কোনো দিনই হবে না।’ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, ‘ রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প, আমাদের নির্বাচন থেকে দূরে থাকুন। কানাডার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার একমাত্র মালিক হচ্ছে জনগণ। তারা ব্যালট বাক্সে নির্ধারণ করবে আগামীতে কি হবে, না হবে’।
তিন মাস আগেও অবশ্য কানাডার রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্য রকম ছিল। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়ে পদত্যাগ করেন কানাডার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো। দলের নতুন নেতা নির্বাচিত হন কার্নে। তার পর বিশ্ব রাজনীতিতেও বড় পট পরিবর্তন ঘটে। আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সে দেশের সঙ্গে পড়শি কানাডার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। কানাডার একাধিক পণ্যে চড়়া শুল্ক চাপানোর কথা জানান ট্রাম্প। কানাডাকে আমেরিকার ‘৫১তম প্রদেশ’ বলে উল্লেখ করে তা দখল করার ইঙ্গিতও দেন তিনি।
ট্রাম্প যত কানাডার বিরুদ্ধে সুর চড়াতে থাকেন, ততই নিজেকে সে দেশের মুশকিল আসান হিসাবে তুলে ধরেন লিবারাল নেতা কার্নে। ভোটারদের তিনি বোঝান যে, ট্রাম্পের আগ্রাসী মনোভাবের হাত থেকে কানাডার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পারেন তিনিই। দেশের টালমাটাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও তিনি সামলে নেবেন বলে আশ্বস্ত করেন প্রাক্তন ব্যাঙ্কার কার্নে। ভোটের ফল বলছে, টালমাটাল পরিস্থিতিতে তাঁর এবং লিবারাল পার্টির কথাতেই আস্থা রেখেছেন কানাডার ভোটারেরা। ভোটের আগে বিরোধী কনজ়ারভেটিভরা অনেকটা এগিয়ে থাকলেও এবারেও তারা ক্ষমতায় আসতে পারলো না।
যাই হোক, কার্নি এবং লিবারেলরা টানা চতুর্থ মেয়াদে দলের জয় নিশ্চিত করে নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে !
তবে সামনে আরও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কানাডিয়ান পণ্যের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক শুল্ক আরোপের পাশাপাশি, কানাডা জীবনযাত্রার ব্যয় সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। কানাডার ৭৫% এরও বেশি রপ্তানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যায়, তাই ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি এবং উত্তর আমেরিকান গাড়ি নির্মাতাদের কানাডার উৎপাদন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরের ইচ্ছা দেশটির অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। প্রচারণার সময়, কার্নি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে মার্কিন পণ্যের উপর পাল্টা শুল্ক থেকে তারা বানিজ্যিক সুবিধা নেবে। এবং তা থেকে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাড়াবে। বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে যে আয় হবে, তা ক্ষতিগ্রস্ত কানাডিয়ান শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ করা হবে।
এভাবেই কোন দেশ বা জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকলে বর্হিঃবিশ্বের সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সম্ভব। প্রতিপক্ষ যত বড় বা শক্তিশালী দেশই হউক না কেন, জনগণের ঐকবদ্ধ উদ্যোগ তাকে পরাভূত করা কোন ব্যাপারই না !