বাংলাদেশে ইউটিউবে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর ভিডিও। তথ্য যাচাইকারী সংস্থা ডিসমিসল্যাবের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০২৫ সালের মার্চ মাসে এক সপ্তাহে অন্তত ২৯টি ইউটিউব চ্যানেল একাধিক ভুয়া ভিডিও প্রকাশ করেছে। বিশ্লেষণ করা ২৮৮টি ভিডিওর সবগুলোই কাটা-ছেঁড়া ও বিকৃত কনটেন্ট দিয়ে তৈরি।
এসব ভিডিওতে ব্যবহার করা হচ্ছে মনগড়া শিরোনাম, বিভ্রান্তিকর থাম্বনেইল এবং ভুল তথ্যভিত্তিক বক্তব্য। উদাহরণস্বরূপ, একটি ভিডিওতে সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মধ্যে বিতর্ক পরিচালনা করতে দেখা যায়। তবে সেটি সম্পূর্ণভাবে কৃত্রিমভাবে তৈরি—ছবির সঙ্গে কণ্ঠ মিলছে না, ভিন্ন উৎসের ফুটেজ জোড়া দিয়ে সাজানো ভিডিও।
আরেক ভিডিওতে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহকে নিয়ে করা ভিডিওর শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘সেনাবাহিনী সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন’, অথচ ভিডিওতে সেনাবাহিনী প্রসঙ্গই আসেনি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এসব ভিডিওর ৪০ শতাংশ অন্তর্বর্তী সরকারকে লক্ষ্য করে তৈরি, যার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকার আশঙ্কা করছে সংস্থাটি। এ ছাড়া বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও এনসিপিকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এসব ভুয়া ভিডিওতে দেশের পরিচিত সাংবাদিকদের মুখ ব্যবহার করা হচ্ছে। মাসুদ কামাল, খালেদ মুহিউদ্দিনসহ অনেকের ভিডিও ফুটেজ কেটে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে সাধারণ দর্শকরা বিভ্রান্ত হন এবং ভেবে নেন, ভিডিওটি সত্যিই তাদের তৈরি।
সাবেক ফ্যাক্ট-চেকিং সম্পাদক কাদরুদ্দিন শিশির মনে করেন, কিছু কনটেন্ট নির্মাতা রাজনৈতিক পক্ষপাত নিয়ে ভিডিও তৈরি করছেন, আবার কোনো গোষ্ঠী উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভুয়া কনটেন্ট ছড়াচ্ছে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য।
এসব ভুয়া ভিডিও থেকে আয়ও করছে সংশ্লিষ্ট ইউটিউব চ্যানেলগুলো। প্রায় ৯০ শতাংশ ভিডিওতেই বিজ্ঞাপন রয়েছে, যার মাধ্যমে চ্যানেলগুলো অর্থ পাচ্ছে, একইসঙ্গে লাভবান হচ্ছে ইউটিউবও। অথচ প্রকৃত কনটেন্ট নির্মাতারা হারাচ্ছেন দর্শক ও আয়ের উৎস।
ডিসমিসল্যাব জানিয়েছে, বাংলাদেশে ভুল তথ্য ছড়ানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম এখন ভিডিও। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে ছড়ানো ৪২ শতাংশ ভুল তথ্যই এসেছে ভিডিওর মাধ্যমে, এরপর রয়েছে ছবি ও গ্রাফিক কার্ড।
এছাড়া, ভুয়া ফটোকার্ড ও সংবাদমাধ্যমের লোগো ব্যবহার করে প্রচারিত ১২৫টি বিভ্রান্তিকর কনটেন্টের ৭১ শতাংশই ছিল রাজনৈতিক। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রকৃত সংবাদপত্রের ফটোকার্ডকে ভুয়া বলে প্রচার করে আরও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি শুধু সাংবাদিক নয়, গোটা গণমাধ্যম ও দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য সতর্কতা, ডিজিটাল নীতিমালা ও তথ্য যাচাইয়ের ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।



