খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার লামকুপাড়া এলাকায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে ভ্যাকসিন দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বেশ কয়েকটি গরু ও ছাগল মারা গেছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিষয়টি জানাজানি হলে বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রাণিসম্পদ বিভাগের একটি মেডিকেল টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে। মৃত পশুগুলোর ময়নাতদন্ত এবং অসুস্থ পশুদের নমুনা সংগ্রহ করা হয় পরীক্ষার জন্য। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালকের পক্ষে ছয় সদস্যের ওই তদন্ত টিমের নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জেলা ভেটেনারি কর্মকর্তা ডা. মো. সাহব উদ্দিন।
স্থানীয় খামারিদের অভিযোগ, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের পশু চিকিৎসকের পরামর্শে সরকারি ভ্যাকসিন দেওয়ার পরই পশুগুলো গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে মারা যায়। তাদের দাবি, ভ্যাকসিনে ত্রুটি ছিল অথবা একই সিরিজের ভ্যাকসিন একযোগে প্রয়োগ করায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভ্যাকসিন দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পশুর শরীরে অতিরিক্ত জ্বর, চামড়ায় গুটি ও ক্ষত দেখা দেয়। এরপর একে একে গরু ও ছাগল মারা যেতে শুরু করে। গত কয়েকদিনে অন্তত চারটি গরু ও অর্ধশতাধিক ছাগলের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় খামারি লুৎফর রহমান জানান, “ভ্যাকসিন দেওয়ার দুই দিন পর আমার তিনটি ছাগল ও দুটি গরু মারা যায়। খামারে আরও ১৫টি ছাগলকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল, সবগুলোই এখন অসুস্থ। আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি।” তিনি আরও জানান, ঋণ করে গরু কিনে লালন-পালন করছিলেন।
লামকুপাড়ার গৃহবধূ সায়েরা খাতুন বলেন, “আমার স্বামী দিনমজুর, বেশিরভাগ সময় অসুস্থ থাকেন। গরু-ছাগল লালন-পালন করেই সংসার চালাই। ভ্যাকসিন দেওয়ার পর আমার তিনটি ছাগল মারা গেছে, বাকি তিনটি এখন অসুস্থ।”
একই অভিযোগ করেছেন এলাকার ওবায়দুল হক, আবুল কাশেম সওদাগর, আবদুল করিম, শান্তনু দেবী এবং চিকনি ত্রিপুরা। তারা দোষীদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ডা. মো. সাহব উদ্দিন বলেন, “আমরা নমুনা সংগ্রহ করেছি। পরীক্ষার ফল পাওয়ার পরই পশুগুলোর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।”
এদিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে মৃত পশু মাটিচাপা দেওয়ার এবং আক্রান্ত পশুগুলোকে আলাদাভাবে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা সরকারের কাছে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।



